বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্মলগ্নের ইতিহাস

বাংলাদেশের প্রত্যেকটা শেয়ার ব্যবসায়ীকে দেশের পুঁজিবাজার এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখতে হবে। ১৯৫২ সালে কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জে পাকিস্তানি কোম্পানির শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ লেনদেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আলাদা একটি স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সরকারের সামনে। তখন পাকিস্তানের শিল্প সংক্রান্ত প্রাদেশিক পরামর্শক কাউন্সিল পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে।
১৯৫৩ সালের ১৩ই মার্চ অনুষ্ঠিত ওই কমিটির দ্বিতীয় সভায় এ বিষয় একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্ব বাংলার সরকারের বাণিজ্য, শ্রম এবং শিল্প বিভাগের সচিব এ খলিলি’র সভাপতিত্বে ইডেন ভবনের কেবিনেট রুমে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়।

তখন কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকায় করাচি স্টক এক্সচেঞ্জের একটি শাখা খোলার প্রস্তাব করে, কিন্তু সভায় তা সমর্থন পায়নি। তার বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্বতন্ত্র স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার পক্ষেই জোরালো মত উঠে আসে। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালের ৭ জুলাই চেম্বারের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভার আহ্বায়ক জনাব এম মেহদি ইস্পাহানিসহ মোট আটজন ব্যক্তিকে এক্সচেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি তাদের ঐ এক্সচেঞ্জের মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন তৈরিরও অধিকার দিয়ে কোম্পানিজ অ্যাক্ট ১৯১৩ এর অধীনে এটিকে নিবন্ধিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়।

আটজন পৃষ্ঠপোষক নিয়ে ১৯৫৪ সালে গঠন করা হয় ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড। নব গঠিত দি ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন সাদ্রি ইস্পাহানী। ১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্টক এক্সচেঞ্জের আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ কো—অপারেটিভ ভবনে। ১৯৬২ সালের ২৩ শে জুন একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এটির পুনঃনামকরণ করা হয় ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, আবার ১৯৬৪ সালের ১৪ জুন ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড”।

১৯৫৪ সালে যাত্রা শুরু করলেও, ১৯৫৬ সালে লেনদেন শুরু করার অনুমতিপত্র পাওয়ার পরই নারায়ণগঞ্জে স্টক এক্সচেঞ্জের আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালে এটি ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় এবং ১৯৫৭ সালের ১ অক্টোবর স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারের কাছ থেকে ৮.৭৫ কাঠার একটি জমি কিনে ৯ এফ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় এবং ১৯৫৯ সালে নিজের জায়গায় স্টক এক্সচেঞ্জকে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে এটিকে নিকুঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
প্রায় ১৮ বছর অভিভাবকহীন থাকার পর স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে ১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অ্যাক্ট—১৯৯৩—এর অধীনে ১৯৯৩ সালের ৮ জুন ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)’ গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ধসের পর সংস্থাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়। একসময় আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে কাগুজে শেয়ার লেনদেন হতো। ২০১০ সালের ধসের পর থেকে বিষয়টি আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে। বর্তমানে প্রায় সবগুলো কোম্পানির শেয়ার ইলেক্ট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর করা হয়েছে। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে এ স্টক এক্সচেঞ্জ দুটিকে লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর ও মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক (ডি—মিউচুয়ালাইজেশন) করা হয়েছে। (সূত্র : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট)