বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে টাকার পাহাড়ে ২০ কোম্পানি পরিচালক

# রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা
# পরিশোধিত মূলধন ১৩৩ কোটি টাকা

 

এম এইচ রনি
পুঁজিবাজার অর্থসংগ্রহ করে আড়ালে থাকছেন অনেক কোম্পানির পরিচালক। কোম্পানি খারাপ অবস্থায় থাকার কথা বলে কৌশলে টাকার পাহাড় গড়েছে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের ২০ কোম্পানি। দিনের পর দিন পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে, কিন্তু এ কোম্পানিগুলো কোনোরকম লোকসানে না থেকেও ওটিসি মার্কেটে অবস্থান করছে। এতে লাভবান হচ্ছেন এসব কোম্পানির পরিচালকরা। অন্যদিকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিগুলোর এই ধরনের আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ওটিসির ওই ২০ কোম্পানির ভিত বর্তমানে মোটামুটি মজবুত। তারপরও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কোম্পানিগুলো ওটিসি মার্কেটে পড়ে আছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই গত দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। ফলে প্রাপ্য ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এই সুযোগে কোম্পানিকর্তৃপক্ষ নানা কৌশলে অনিয়ম করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুঁজিবাজারের ক্রান্তিলগ্নেও এ কোম্পানিগুলোকে ওটিসিেিত ফেলে রাখা হয়েছে। এগুলোকে মূল মার্কেটে এনে আটকে থাকা বিনিয়োগকারীদের অর্থ পুঁজিবাজারে লেনদেন করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরারা লাভবান হবেন এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ওটিসি মার্কেটের তালিকাভুক্ত ২০ কোম্পানির বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ২৭৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩৩ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অধিকাংশ কোম্পানিই প্রান্তিক হিসেবে লাভে রয়েছে। অথচ এসব কোম্পানি এখনো পড়ে রয়েছে ওটিসি মার্কেটে। এ মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমন্ব^য়হীনতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এই সুযোগে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভ বাড়ানোর নামে টাকার পাহাড় গড়ছে কোম্পানিগুলো।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে কোম্পানিগুলোকে যদি মূল মার্কেটে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়, তাহলে উপকৃত হবে বিনিয়োগকারীরা। কারণ ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলো নানা ধরনের দুনীতি ও অনিয়ম করেও পার পেয়ে যায়। কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ভালো। এছাড়া লোকসানেও নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা উচিত।
এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক কোম্পানির ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য রিজার্ভ টাকা বা সম্পদ থাকা একান্ত দরকার। তবে আমাদের দেশের ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোর রিজার্ভের পরিমাণ লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি। এই ২০ কোম্পানি কোনরকম লোকসানে নেই। তারপরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেনো কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে আনছে না, সেটি বোধগম্য নয়।
ওটিসির ওই ২০টি কোম্পানির মধ্যে আজাদী প্রিন্টাসের রিজার্ভ ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৬৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। বিডি প্রসেস এর রিজার্ভ ৩৩ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৮০ লাখ টাকা। বিডি হোটেলের রিজার্ভ ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪৫ লাখ টাকা। বিএলটিসির রিজার্ভের পরিমান ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চিকটেক্স এর রিজার্ভ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দি ইঞ্জিনিয়ারস এর রিজার্ভ ৬ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। গচিহাতার রিজার্ভ ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। হিল প্লান্টেশরন রিজার্ভ ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৫ লাখ টাকা। হিমাদ্রির রিজার্ভ ৪৮ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭৫ লাখ টাকা। এম হোসেইন গার্মেন্টসের রিজার্ভ ৩ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি টাকা। বিডি মনোসপল পেপারের রিজার্ভ ২৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পেপার প্রসেসিং এর রিজার্ভ ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কাশেম টেক্সটাইলের রিজার্ভ ২ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রাসপিট ইন এর রিজার্ভ ১১ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। রাসপিট ডাটার রিজার্ভ ৮৭ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা। রোজ হ্যাভেন এর রিজার্ভ ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সোনালী পেপার এর রিজার্ভ ৪৮৮ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের রিজার্ভ ২১৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের রিজার্ভ ১০ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং ইউসুফ ফ্লোয়ারের রিজার্ভ ৪০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

Tagged