পুঁজিবাজারের চিত্র দুই বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজার। সরকারের নানামুখী উদ্যোগে আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে চিত্র পাল্টে যাবে। এর মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজার তার স্বরূপ ফিরে পাবে বলে মন্তব্য করছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বিএসইসির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর বেশ কিছু কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএসইসি এই বিষয়টিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে থাকবেন তারা।

গতকাল শনিবার অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফের এক আয়োজনে বক্তব্য রাখছিলেন শিবলী রুবাইয়াত।
ডায়ালগ অন বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি’ শীর্ষক এই সংলাপে বিএসইসি প্রধান অর্থনীতির নানা বিষয়ের পাশাপাশি কথা বলেন পুঁজিবাজার নিয়েও। আগামী দুই বছরের মধ্যে বাজার দারুণ অবস্থানে যাবে বলেও আশার কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে আর্থিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শিবলী রুবাইয়াত বলেন,
যখন এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয় তখন তাদের সবকিছুই ভালো থাকে।

অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত বলেন, বিনিয়োগকারীরা ভালো কিছু দেখেই এখানে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এরপর দেখা যায় অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। এটা মূলত হয় কোম্পানির মালিকের খারাপ মনোভাবের কারণে। অথবা সত্যিকার অর্থেই ব্যবসায়িক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে।’

এসব বিষয়ে আর ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন,
এ ক্ষেত্রে তিনটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে বিএসইসি। ভবিষ্যৎ ভালো হলে কোম্পানির লোকজনকে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা হয়। নতুবা কোম্পানিতে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়। তারাও যদি না পারে তাহলে একটি এক্সিট পলিসি রাখা হয়। যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ারের অন্তত বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে পারেন।’

পুঁজিবাজারে যেসব বিষয় থাকা উচিত, সেগুলো এখন নেই বলে মনে করেন শিবলী রুবাইয়াত। তিনি বলেন,
এখানে কোম্পানিগুলোর শুধু ইকুইটি নিয়ে কাজ করা হয়। ফলে সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতেও পুঁজিবাজারের লেনদেন মাত্র এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।’

উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারে আসার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,
তারা বিনিয়োগের জন্য অর্থ পেতে বরাবরই ব্যাংকমুখী হয়ে থাকেন। তাদের প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। তবে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি ঋণে ঝুঁকি বেশি। কারণ, উদ্যোক্তারা সব সময় একই স্রোতে ব্যবসা করতে পারেন না। এতে খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর জন্য ব্যাংক এবং উদ্যোক্তা উভয়ই বিপদগ্রস্ত হন।
অথচ উদ্যোক্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন হলে এবং তাদের প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অর্থ পুঁজিবাজার থেকে দেয়া হলে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না।’

বড় কোম্পানির পুঁজিবাজারে না আসার আগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
এখানে পরিশোধিত মূলধনের অঙ্ক একটি বড় সমস্যা।
বড় কোম্পানিগুলো সাধারণত বড় বিনিয়োগ করে। সেখানে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু বাংলাদেশ পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগের অর্থ উত্তোলন সক্ষমতার হার কম।

দেখা যাচ্ছে ৫০০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের একটি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে কোটা অনুযায়ী তুলতে পারছে ৭০ কোটি টাকা। এখন বিনিয়োগের যে সম্প্রসারণ হচ্ছে সেখানে এই টাকা বাংলাদেশ টাকা করে খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না।’ এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং বড় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনাসহ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিএসইসির নানা উদ্যোগের কথা জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান।
বড় বিনিয়োগ বা বড় প্রকল্পের অর্থায়ন সমস্যা দূর করতে বন্ডের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন শিবলী রুবাইয়াত।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন,
পৃথিবীর বড় বড় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করেছে বন্ড। বিনিয়োগ প্রশ্নে বড় অর্থের সংস্থান পেতে আমাদের দেশেও বন্ডের গুরুত্ব বাড়ছে। সরকারও বন্ডের বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাই পুঁজিবাজার প্রশ্নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও বিভিন্ন নামে বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে।’

এসএমজে/২৪/রা

Tagged