অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন

উন্নতবিশ্বের অনেক দেশেই পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির হৃদপিণ্ড মনে করা হয়। এখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শিল্পায়ন এবং অর্থনীতি চাঙ্গা করা হয়। এর সঙ্গে পুঁজিপতি থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সকলেই সম্পৃক্ত হন। এটি হয়ে উঠে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের সোপান। সুতরাং সরকারের একটা বড় মনোযোগ পুঁজিবাজারে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে বলছেনে- ‘পুঁজিবাজারে যেসব চ্যালঞ্জে আছে সেগুলো আমরা দূর করবো। পুঁজিবাজারের সক্ষমতা ফেরাবো। যাতে করে পুঁজিবাজারটা টেকসই হবে।’
অত্যন্ত সুন্দর আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তার আশ্বাস অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। একইসঙ্গে মন্ত্রীর আশ^াস প্রমাণ করে, শুধু সরকারই নয় দেশের স্বার্থেই পুঁজিবাজারের উন্নয়ন জরুরি। এখানে বলার বিষয় হচ্ছে, ২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এতে অনেক কিছুর পরিবর্তনও হয়েছে। নতুন করে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের নিশ্চয়ই ভালো দিকও রয়েছে। কিন্তু, গত প্রায় এক দশক ধরে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যে হতাশা এবং অপ্রাপ্তি সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো সমাধান কি হয়েছে? বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা কি ফিরে এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মলেন কক্ষে পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদরে সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এক র্দীঘ মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ওই আশ^াসের কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
এ সময় মন্ত্রী আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, সেটি হলো- পুঁজি বাজার অর্থনীতির অন্যতম মৌলকি এলাকা। সেজন্য সরকার কখনোই পুঁজি বাজারকে অবহলো করে না। মধ্য, উচ্চ থেকে সাধারণ, সবাই পুঁজিবাজারে জড়িত। তাই এটি সরকাররে বিশেষ ও সর্তক মনোযোগ দাবি করে।
জোর দিতে চাই, ‘অর্থনীতির অন্যতম মৌলিক এলাকা’ কথাটাও খুবই মৌলিক। কারণ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এই জায়গাটায়ই গুরুত্ব দেয়া জরুরি। তাহলে হয়তো অনেক কিছুই সহজ হয়ে আসতে পারে। মানুষ যেমন তার আত্মার সঙ্গে ছলনা করতে পারে না, তেমনি অর্থনীতির অন্যতম মৌলিক এলাকা বা আত্মার সঙ্গেও কোনো ধরনের কারসাজি কাম্য নয়।
এদিন মন্ত্রী আরও বলেছেন- ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে পুঁজিবাজারে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবো।’ এটিও বিনিয়োগকারীদের মনের কথা। কারণ আমার বিশ^াস, জিজ্ঞেস করলে শতভাগ বিনিয়োগকারীই বলবেন- ‘আমরা পুঁজিবাজারে ন্যায় বিচার চাই।’ কারণ এখানে অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা ন্যায় বিচার দেখেন না। তারা কোম্পানির প্রোফাইল ঘেটে সব ধরনের হিসাব-নিকাশ করে সঠিক উপায়ে বিনিয়োগ করেও সর্বস্বান্ত হয়েছন, এমন নজীর বহু রয়েছে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সঠিক কাজ হতে পারে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং আশ্বাস দিলে সেটি বাস্তবায়ন করা।

কাজল কানন, বার্তা সম্পাদক, স্টক মার্কেট জার্নাল

Tagged