১৪০০ কোটি টাকা উধাও ফারইস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চার বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবে ভয়াবহ গরমিল দেখা গেছে। গত ৪ বছরে তাদের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়েও চলতি বছর ৬শ ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লাইফ ফান্ডে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু বৃদ্ধি পাওয়া তো দূরের কথা, কোম্পানিটির আয় ও বিনিয়োগ ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা কমে গেছে। এতো টাকা কোথায় গেছে তা নিরীক্ষা করে দেখার উদ্যোগ নিচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

কোম্পানিটির গত ৪ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও বিনিয়োগ থেকে মোট আয় করে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর ব্যবস্থাপনা খাতে ও বীমা দাবি পরিশোধ বাবদ মোট ব্যয় করে ৩ হাজার ৭৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত থাকে ৬২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের লাইফ ফান্ড।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির বিনিয়োগ বা সম্পদ বাড়ার কথা। অথচ আলোচ্য সময়ে আয় ও বিনিয়োগ থেকে কমে গেছে ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এফডিআর কমে গেছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি, ব্যাংকের নগদ টাকা কমে গেছে ৭০ কোটি, মোট বিনিয়োগ কমে গেছে ১৮০ কোটি।

জানা গেছে, লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বছরে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়াম থেকে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বাদ দিয়ে নেট প্রিমিয়াম হিসাব করা হয়। এর সঙ্গে যোগ করা হয় বিনিয়োগ থেকে আয়। এটাই কোম্পানির মোট আয়। এরপর সেখান থেকে কমিশন, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতের খরচ তথা ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাদ দেয়া হয়। বাদ দেয়া হয় বীমা দাবি পরিশোধ বাবদ খরচ। যা মূলত মোট ব্যয়।

মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকে তাকে বলা হয় চলতি বছরের লাইফ ফান্ড। আবার চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের সঙ্গে বিগত বছরের লাইফ ফান্ডও যোগ হয়। চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের এই টাকাই বিনিয়োগ করা হয় বা স্থায়ী সম্পদ কেনা হয়।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানিটির এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ছিল ১ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। পরের বছর ১৫২ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এরপর আরো ২৯২ কোটি টাকা কমে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১১২৮ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে এই স্থায়ী আমানত আরো ৭২৪ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৪০৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০১৫ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড ছিল ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। যা পরের বছর ৮৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। এরপর আরো ১২৮ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

তবে ২০১৮ সালে কোম্পানিটির এই লাইফ ফান্ড ৬ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে লাইফ ফান্ড বেড়েছে ২০৯ কোটি টাকা। অথচ আয়-ব্যয় বাদ দিয়ে ৩ বছরে চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ৬শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৬ সালে তা ৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬শ ২৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা আবার ১২৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭শ ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তবে ২০১৮ সালে এসে তা আবার ২শ ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কমে গিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫শ ১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। আর ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের ব্যবধানে মোট বিনিয়োগ কমে ১৮০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

এসএমজে/২৪/রা

Tagged