এসএমজে ডেস্ক
বন্ধ কোম্পানির শেয়ার কিনে কোম্পানির পরিচালনায় যুক্ত হওয়া সাংবাদিক এ এস এম হাসিব হাসানকে শেয়ার কারসাজির দায়ে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হাসিব হাসান বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হামি ইন্ডাস্ট্রিজের (সাবেক ইমাম বাটন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আজ বুধবারের সভায় এ জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে ইমাম বাটনের (বর্তমানে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ) শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে কারসাজির দায়ে হাসিব হাসানকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, হাসিব হাসান শেয়ারবাজার থেকে বন্ধ কোম্পানি ইমাম বাটনের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির ঘটনা ঘটান। তাতে বন্ধ কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে বাজারে। একপর্যায়ে তিনি শেয়ার কিনে কোম্পানিটির পরিচালনায়ও যুক্ত হন। বিএসইসির পদত্যাগী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ইসলামকে ধরে পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি কোম্পানিটির পর্ষদে যুক্ত হন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন।
শেয়ার কারসাজির ঘটনা ও জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিব হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জরিমানা–সংক্রান্ত বিএসইসির কোনো চিঠি আমি হাতে পায়নি। তাই কি অভিযোগ জরিমানা করা হয়েছে, তা আমি নিশ্চিত নই। গত বছর আমি ইমাম বাটনের শেয়ার কিনে কোম্পানিটির পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হই। তবে কোনো ধরনের কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না।’
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইমাম বাটন ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ইমাম গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এটি তৈরি পোশাক খাতের বোতাম উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে শেয়ারবাজারে এটি দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত হয়। একপর্যায়ে হাসিব হাসানসহ তাঁর সহযোগীরা এ শেয়ার লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হন। তাতে হু হু করে বাজারে এটির শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে।
হাসিব হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানিটির ব্যবসার ধরনে পরিবর্তন আনে। মাছ চাষ ও জুতা তৈরির নতুন ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ জন্য নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের কথাও জানান বিনিয়োগকারীদের। বরগুনায় হাসিবের নিজ গ্রামে পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর কারখানায় জুতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চে বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি প্রতিনিধিদল কোম্পানিটির নতুন ব্যবসা সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্ত করে। তাতে মাছ চাষের জন্য লিজ নেওয়া তিনটি পুকুরে কোনো মাছ খুঁজে পায়নি ডিএসইর দল। এমনকি পুকুরে মাছ চাষের বিপরীতে মাছের পোনা কেনার কোনো তথ্যপ্রমাণও পায়নি পরিদর্শনকারী দল। একইভাবে চট্টগ্রামে কারখানা সরেজমিনে গিয়ে সেখানে কোম্পানির দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী জুতা তৈরির তথ্যপ্রমাণও মেলেনি। এ কারণে ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, মাছ চাষ ও জুতার নতুন ব্যবসা থেকে কোম্পানিটি মুনাফা ও আয়ের যে তথ্য দিয়েছে, তা মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত। ডিএসইর পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দেওয়া হলেও বিএসইসির শিবলী কমিশন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং হাসিব হাসান শিবলী কমিশনের আনুকূল্য পেয়েছেন।
হাসিব হাসান শেয়ার ব্যবসা ও ইমাম বাটনের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে পুঁজিবাজারবিষয়ক সংবাদ ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাওয়ায় মূলধারার সাংবাদিকতায় আর যুক্ত ছিলেন না। যদিও তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে শিবলী কমিশন থেকে নানা সুবিধা পেয়েছেন।