করোনার চিকিৎসায় প্রায় প্রস্তুত বসুন্ধরার হাসপাতাল

এসএমজে ডেস্ক:

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোগীদের সেবায় সংকটে পড়েছে হাসপাতালগুলোতে। এই পরিস্থতিতে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দেশের বৃহত্তম অস্থায়ী হাসপাতালটি নির্মাণে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ।

হাসপাতালে এসে গেছে রোগীর শয্যা, আসবাবসহ অধিকাংশ সরঞ্জাম। চিকিৎসক ও নার্সদের বহনযোগ্য কক্ষ ও টয়লেট প্রস্তুত শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে বেড, আসবাব ও চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো লে-আউট করে জায়গামতো বসানোর কাজ।

হাসপাতালের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আর কয়েকদিনের মধ্যেই করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় এটি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালটির নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলীরা।

ইতিমধ্যে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান। তিনি হাসপাতালটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলীদের কাছ থেকে নির্মাণ কাজের অগ্রগতির খোঁজ-খবর নেন এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে যে কোনো ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম. এম. জসীম উদ্দীন, মার্কেটিং সেক্টর-এ এইচওডি জেড এম আহমেদ প্রিন্স, হেড অব সাপ্লাই চেইন সেক্টর-এ মো. আব্দুর রহমান জিপং, এলপি গ্যাস জি. এম সেলস জাকারিয়া জালাল প্রমুখ।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। আর ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম বলেন, ‘রোগীর বেড বসানোর জন্য ছয়টি ক্লাস্টার আমরা পর্যায়ক্রমে তৈরি করে আসছি। আমাদের ফ্লোরম্যাট বসানোর কাজ চলছে। পাশেই বেডগুলো এনে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হাসপাতালটিকে চিকিৎসাসেবা চালুর জন্য প্রস্তুত করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।’

হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এ ছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। ৪ নম্বর হলে ৭১ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত পাইনি। আমরা প্রস্তুত আছি। নির্দেশনা পেলে দ্রুত এটা তৈরি করে ফেলতে পারব।’

আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত ফ্লোরম্যাট বসানো ও বেড স্থাপনের কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ২ নম্বর হলে বেড স্থাপন হয়ে গেছে। মনে হয় না কার্যক্রমগুলো শেষ করতে আর খুব বেশি সময় লাগবে। মূলত, বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ছাড়া পূর্ণাঙ্গভাবে অস্থায়ী হাসপাতাল করার অভিজ্ঞতা কারোরই ছিল না। স্বাধীনতার পর এতবড় অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরির কাজও বাংলাদেশে হয়নি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থায়ী হাসপাতাল করেছে, কিন্তু অন্য একটা স্থাপনাকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপ দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। এজন্য তাদেরকেও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। বসুন্ধরার পক্ষ থেকেও তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাঁর প্রত্যাশা ২৬ বা ২৭ এপ্রিল থেকে এখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করা যাবে।

এর আগে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এসএমজে/২৪/বা

Tagged