দেশের পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার লেনদেনের শুরুতে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হলেও শেষ পর্যন্ত প্রধান মূল্যসূচক সামান্য বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের মিশ্র প্রবণতা থাকলেও দুই বাজারেই বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে শেষ ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
এর আগে ঈদুল আজহার আগে পুঁজিবাজারে টানা চার কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যায়। ফলে কিছুটা স্বস্তি নিয়েই ঈদ উদযাপনে যান বিনিয়োগকারীরা। পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন শুরু হয়েছে।
ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসের লেনদেনের শুরুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়লেও শেষ পর্যন্ত বড় হয় দরপতনের তালিকা। ফলে ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে দরপতন দেখতে হয় বিনিয়োগকারীদের। দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারও শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। সেই সঙ্গে কমে যায় লেনদেনের গতি। তবে মঙ্গলবার সূচকের সামান্য উত্থান হয়। অবশ্য সূচক বাড়লেও লেনদেনের পরিমাণ কমে যায়।
এ পরিস্থিতি বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। এতে এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টার পর দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দরপতনের তালিকায় স্থান করে নিতে থাকে। ফলে কমতে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। অবশ্য এর মধ্যেও দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে কিছু বড় মূলধনের প্রতিষ্ঠান। ফলে দরপতনের তালিকা বড় হলেও কোনো রকমে প্রধান মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিপরীতে ১০৯টির দাম কমেছে। আর ১৮০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচকের মিশ্র প্রবণতার দিনে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৯০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬০০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৯০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় বাড়েনি, গত ১২ জুনের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
এ লেনদেন বাড়াতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৬ কোটি ৬০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং মিলেসের ২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ম্যাকসন স্পিনিং, খান ব্রাদার পিপি ওভেন ব্যাগ, বাংরাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, অলেম্পিক এক্সসরিজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেএমআই হসপিটাল এবং আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির এবং ৯১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।