রুহান আহমেদ:
বীমা খাতে অতিরিক্ত কমিশন বাণিজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান এ খাতের বাণিজ্য কমাতে পারে। যারা বীমা খাতে কমিশন বাণিজ্যে জড়িত তারা এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা আনতে পিছপা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে খাতটিতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য কমলেও মুনাফা কমবে না।
ধরা যাক, কোনো কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার বীমা বিক্রি করতো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, আর কমিশন দিত ৪০ কোটি টাকা (৪০ শতাংশ) ভিত্তিতে। ফলে কোম্পানির মুনাফা থাকত ৬০ কোটি টাকা। আর এ আইন পরিপালনের জন্য কোম্পানির বিক্রি কমে দাঁড়াল ৬০ কোটিতে এবং কমিশন দিতে হল ৯ কোটি টাকা (১৫ শতাংশ) ভিত্তিতে। ফলে কোম্পানির মুনাফা থাকল ৫১ কোটি টাকা। ফলে আইনটি পরিপালনের পরে কোম্পানির বিক্রি কমলেও মুনাফা কমার তুলনায় বেড়েছে। ফলে এ খাতের ক্ষতির তুলনায় লাভের মাত্রাই বেশি হবে বলে আশা করা যায়।
এর আগে, দেশের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও কোম্পানিগুলোর মালিকরা ১৫ শতাংশের বেশি এজেন্ট কমিশন হবে না- এমন সিদ্ধান্তে আসে। আর তা বাস্তবায়নে প্রত্যেকেই জোর ভূমিকা পালন করছে।
সেই প্রেক্ষিতে- সাধারণ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম সংগ্রহের জন্য বীমা এজেন্টদেরকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
এজেন্টকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়ার বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সকল বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বীমা মালিকদের সমিতি বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ কবির হোসেন বলেন, বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী প্রিমিয়াম সংগ্রহের জন্য বীমা এজেন্টকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেয়ার সুযোগ নেই। কোনো সাধারণ বীমা কোম্পানি চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে ১৫ শতাংশের বেশি এজেন্ট কমিশন দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত কমিশন দেয়া নেয়া দুটোই অন্যায়।
এ বিষয়ে বিআইএ’র কার্যনির্বাহী সদস্য নাসির উদ্দিন পাভেল বলেন, বেআইনিভাবে এজেন্টকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেয়ার কারণে বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে সংকটের সম্মুখীন। তাই আইডিআরএ এবং বিআইএ’র যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ আগস্ট থেকে আইন কঠোরভাবে প্রতিপালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদি কোনো বীমা কোম্পানি, ব্যাংক এবং বীমা গ্রহীতা এই ধরনের বেআইনি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বীমাকর্মী বলেন, কোম্পানিগুলো আগে যে পরিমাণ কমিশন আমাদের দিত এখন সেই পরিমাণ দিবে না। যার কারণে বীমা কর্মীদের আগ্রহের যায়গাটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে এরই মধ্যে দেখবেন অনেক বীমা কোম্পানির আয় কমে যাবে। যা এই খাতের জন্য দুঃখজনক।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই আইডিআরএ, বিআইএ এবং সকল সাধারণ বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যন সাধারণ বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য ১৫ শতাংশের বেশি এজেন্ট কমিশন দেয়াকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এরপর গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নরের সভাপতিত্বেব অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ এবং বিআইএর প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ১৫ শতাংশের অধিক কমিশন বন্ধ এবং আইডিআরএ সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত সকল বিষয়ে সহযোগিতার প্রদানে সম্মত হন।