এম এইচ রনি:
উৎপাদনসহ, ব্যবসায়িক কার্যক্রম বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে- এমন বেশকিছু কোম্পানি রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এসব অস্তিত্ব সংকটে থাকা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন। অপর দিকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। এই চিত্র যেনো দেখার কেউ নেই। বিনিয়োকারী এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সুশাসনের অভাব থাকায় এটি সম্ভব হচ্ছে। এসব কোম্পানি তালিকাভুক্তিকালে অল্প বিনিয়োগকে বড় করে দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে। এরপর রাইট শেয়ারের মাধ্যমেও বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করেছে। পরে লোকসানি কোম্পানি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিচালকরা টাকা হাতিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও বিনিয়োগ বা রাজার হালে জীবনযাপন করলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পড়েছেন বিপাকে। সেই বিনিয়োগকারীর কী হবে?
জানা যায়, গত ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটি আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। দুবছর তাদের ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো দেখালেও ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় নানা অনিয়ম। প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ অনাদায়ী পড়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানির বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে কয়েকটি ব্যাংক। একই সঙ্গে মূলধন ঘাটতির কারণে স্পন্দন ব্র্যান্ডের রাইস ব্রান তেল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কোম্পানিটির মূল উদ্যোক্তা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুল গণি গালিব ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় গ্রেফতারের পর সংকটের শুরু। অন্যদিকে না জেনে এ কোম্পানির শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এধরনের কোম্পানির বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগে থেকেই কেন ব্যবস্থা নেয় না। এসব কোম্পানি আইপিও অনুমোদেন কিভাবে পায়? বাজার সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, যেসব কোম্পানি এ অবস্থায় রয়েছে সেগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ কেন ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊর্ধতন কর্মকতা এসএমজে২৪ ডটকমকে বলেন, এসব কোম্পানির লেনদেন স্থগিতে বিষয় নিয়ে এখনো কোনরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইস) কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।
এ ধরনের কোম্পানির বিষয়ে সরেজমিনে জানতে অনুসন্ধান চালায় এসএমজের অনুসন্ধানী টিম, তাতে বের হয়ে আসে কিছু চানচঞ্চল্যকর তথ্য। এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একমাত্র স্বজন কুমার বসাক ছাড়া কাউকে পাওয়া জায়নি। তার সাথে ফোনে কথা বলা হলে তিনি রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স এ বসেন বলে জানান। পরদিন রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স এ সরাসরি দেখা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, কোম্পানিটি হাত বদলের চেষ্টা ছিল, তবে তা আর হয়নি। তবে এই মুহূর্তে কোম্পানিটির কোনো সম্ভাবনাও নেই।
নতুন ভবনে কোম্পানির অফিস স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু কোম্পানির আয় নেই, তাই বিশাল ব্যয়ের অফিস খরচ বহন করা আমাদের জন্য কষ্টের। তাই স্বল্প পরিসরে নতুন অফিস নেয়া হয়েছে।
শুধু এই কোম্পানি নয়, এমনি অস্তিত্ব সংকটে থাকা আরো কোম্পানি রয়েছে ডিএসইর তালিকাভুক্ত। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে এক কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে পুনরায় বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের একটা রাইট শেয়ার ইস্যু করা হয়। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ধরা হয় ১৫ টাকা। তখন কোম্পানিটি ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। এমনই অনিয়মে জরড়য়ে পড়া আরেক কোম্পানি হচ্ছে ডেল্টা স্পিনার্স লিমিটেড।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন- এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত রেখে, সবগুলো কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।