এসএমজে ডেস্ক
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নিরাপদ হলে ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেবো। তিনি বলেন, আমি ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে চাই, ফ্লোর প্রাইস যত দ্রুত সম্ভব তুলে দেব। তবে বাজারে ফ্লোর প্রাইস তোলার মতো পরিস্থিতি হতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নিরাপদ হলে আমি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেব।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে পুঁজিবাজার নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ইআরএফের সদস্য মুহাম্মদ মোফাজ্জল।
”অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভবনা” শীর্ষক সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম প্রমুখ।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরা আমার কাছে জানতে চান- ফ্লোর প্রাইস কবে উঠবে। আমি বলেছি, আমি ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে না। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা যদি বুঝি মানুষের পুঁজি বিপদে পড়বে না সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেবো।
ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কীনা- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই যদি একটু শক্ত অবস্থান দেখতে পাই, তখন আমরা যদি বুঝি মানুষের পুঁজি বিপদে পড়বে না সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেবো। খুব তাড়াতাড়ি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার চেষ্টা আমাদের মধ্যে আছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শিবলী বলেন, অর্থনীতিতে একটা মহাবিপর্যয় আসতে যাচ্ছে এটা আমরা বুঝতে পারছিলাম। তখনি আমরা দেখতে পারছিলাম রিজার্ভের সঙ্গে সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেট ভোলাটিলিটি। এ কারণে আমাদের (পুঁজিবাজার) ইনডেক্স কমতে শুরু করে। তখন আমরা বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার কথা প্রথমে বিবেচনা করি। তখন যে অবস্থা তাতে আমরা লাভ-ক্ষতির চিন্তা করবো না।
তিনি বলেন, আগে আমার মানুষের পুঁজিটা নিরাপদ করে দিতে হবে। সে কারণে আমরা চাইনি যে এমন কোনো ঘটনা ঘটুক, যেটা আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে। সে কারণে ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও আমরা, সেসময় ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়। আমরা কখনো চাইনি ফ্লোর প্রাইস দিতে।
পুঁজিবাজার ওঠানামা করলে বিনিয়োকারীদের লাভের সুযোগ বেশি থাকে বলে মন্তব্য করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সবসময় যদি বাজার ভালো থাকে, তাহলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বর্তমান মার্কেটের খারাপ পরিস্থিতিতেও অনেকে ভালো মুনাফা করেছে। আমাদের অনেক বিনিয়োগকারী হুজুগে ও গুজবে বিনিয়োগ করে। লাভ হলে কোনো সমস্যা নেই। লোকসান করলেই আমাদের দোষ।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট টেকনিক্যাল বিষয় এটা খুব কম মানুষ বোঝে। আমরা ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। দেশের প্রতিটি বিভাগ আমাদের কাভার করা শেষ, এখন জেলাগুলোতে আমরা বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি। বিদেশেও আমরা আমাদের দেশের ব্যান্ডিং এবং ইনভেস্টমেন্ট জোগাড় করছি।
বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বন্ডের মাধ্যমে আমরা গত দেড়-দুই বছরে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি অর্থনীতিতে। যদি আইপিও (প্রাথমিক গণ প্রস্তাব) এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের দিতাম, এতো টাকা দেওয়া সম্ভব হতো না। দ্বিতীয়ত আইপিও’র কোয়ালিটি থাকতো না। এখন বন্ড মার্কেট বেশ ভালোভাবে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, যখন শুরু করেছিলাম তিন বছরে একটা মুহূর্তও পায়নি স্বাভাবিক সময়, প্রত্যেক সময় প্রবলেম। আগামী ৬ মাস পর নির্বাচন। তিন বছর করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সামনের ছয় মাস নির্বাচন। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ তৈরি করবো, সেই সুযোগ পাচ্ছি না। এ রকম একটা মুহূর্তে আমরা যে মার্কেট ধরে রেখেছি, রাখার চেষ্টা করছি, এটা খুব কঠিন কাজ। এতো স্টেকহোল্ডার, এতো রকমের মানুষ, বিনিয়োগকারী, এতো রকমের সমস্যা ব্যালেন্স করা বাস্তবতার নিরিখে কঠিন। তারপরও আমরা সবাই চেষ্টা করছি।
সাংবাদিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে। সারাক্ষণ ফোন আসে, ইমেইল আসে। আপনাদের কাছে অনুরোধ ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ২৬-২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা সরকারের কাছে দিয়েছি। বলেছি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই বসব।