অগ্নি সিস্টেমসের বোর্ড পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত বিএসইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পুঁজিবাজারে তথ্য প্রযুক্তিখাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অগ্নি সিস্টেসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকায় এবং আর্থিক অবস্থার সার্বিক উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

কোম্পানিটিতে দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন করেছে বিএসইসি। তাঁরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনসুরা আক্তার।

এছাড়াও ন্যূনতম দুইজন বা তার অধিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মনোনয়নের জন্য কোম্পানিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মনোনীত একজনকে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির জন্য বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছে।

নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন। ২০১৬ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসি সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অগ্নি সিস্টেমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যান্য পরিচালকদের কাছে পাঠিয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রার ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এবং আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ডিএসই ও সিএসইর দাখিল করা প্রতিবেদন ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই এবং পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পরিশোধিত মূলধনের মাত্র ৯.৩৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ২১ মে, ২০২১ সালের ২২ মার্চ, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরের জারি করা নির্দেশনা এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২সিসি ধরা লঙ্ঘন করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ও আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এরই ধরাবাহিকতায় ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে ২ শতাংশ বা তার অধিক শেয়ার ধারণকারীদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের সংখ্যা ন্যূনতম দুইজন বা তার অধিক হতে পারবে।

এছাড়া, কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের ২৭.২১ শতাংশ শেয়ারধারণ থাকায় আইসিবি’র মনোনীত একজন পরিচালক হিসেবে পর্ষদে অন্তর্ভুক্তি করতে হবে। আর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থতার জন্য বিএসইসি দুইজন ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।

এছাড়াও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার অবরোধমুক্ত রাখা হবে। আলোচ্য বিষয়গুলো পরিপালন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএসইসির মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা ঋণ বা অন্য কোনো দায়ের জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেবেন না। তারা এসব কোম্পানির জন্য ঋণখেলাপি হবেন না। এসব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত বিদ্যমান স্বতন্ত্র পরিচালকরা কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্যতা হারাবেন।

২০০৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় অগ্নি সিস্টেমস। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৭২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পরিশোদিত মূলধনের এ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৯.৩৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪১.৭৭ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৮.৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে।
এসএমজে/২৪/রা

Tagged