দেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাপক মন্দা অবস্থায় রয়েছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর অনেক প্রত্যাশা ছিল এবারের বাজেটকে ঘিরে। তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে, অর্থমন্ত্রী এমন কিছুর ঘোষণা দেবেন যার ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। দুঃখজনকভাবে বলতে হয় যে, বিনিয়োগকারীদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সত্যিকারভাবে মন্দা পুঁজিবাজারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত এবারের বাজেটে নেই।
যদিও অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ৬টি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সে পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পর্যালোচনা, আইসিবি’র বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা। ঘোষিত পদক্ষেপের সবই প্রশংসাযোগ্য। তবে অধিকাংশ পদক্ষেপের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়নি, ফলে সেসবের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। বাজেট ঘোষণা-পরবর্তী সূচক পতনের মাধ্যমেই সে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে।
পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িতদের বড় দাবি ছিল যে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিশেষত ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ নানা খাতের আয়কর হার কমানো এবং সেই সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের বিদ্যমান পার্থক্য আরও বৃদ্ধি করা। এরূপ প্রস্তাবের পেছনে যুক্তি এই ছিল যে করহারের পার্থক্যে উৎসাহিত হয়ে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে সেটা মোটেই ঘটেনি; বরং উল্টো হয়েছে।
ব্যাংকবহির্ভূত অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির বর্তমান করহার ৩৫ শতাংশ। বাজেটে তা আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তদুপরি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো হয়নি, যা বর্তমানে ২৫ শতাংশ রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের দাবি ছিল, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার। বাজেট প্রস্তাবে তা আসেনি। ফলে উভয় শ্রেণির কোম্পানির করহার গ্যাপ না বেড়ে বরং বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে বাজেটে পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে।