শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদুৎ খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড প্রায় ৫ বছর ধরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে ছিল। এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে জেড’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিকে আরও শক্তিশালী করতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই স্বতন্ত্র পরিচালক কোম্পানিটিকে সচল করার পাশাপাশি আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে দুজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ওই কোম্পানিতে আরও চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। ওই চারজনের মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পক্ষ থেকে মনোনীত একজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রাখা হয়েছে। ফলে কোম্পানিটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে বিএসইসি।
বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডসের জন্য বিএসইসির মনোনীত নতুন তিনিজন স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন—কাজী শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ ও নুসরাত খান। আর ওই কোম্পানিতে ইতোপূর্বে নিয়োগ দেওয়া দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন—এ এফ এম আবদুল মঈন ও মো. সাইফুদ্দিন খান। এছাড়া, আইসিবির পক্ষ থেকে মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন মো. রফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে কাজী শফিকুল ইসলাম কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড না দেওয়ায় বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস ২০১৬ সালের ৪ মে
জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর থেকে প্রায় ৫ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এজন্য কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতা আছে বলে মনে করে বিএসইসি। তাই এ জাতীয় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বিডিওয়েল্ডিং কোনো মুনাফা ছাড়াই ১ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। এতে সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিটি। এছাড়া, স্থায়ী সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে নগদে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা লেনদেন করে অনিয়ম করেছে। এছাড়া, ব্যালেন্স শিটে
ল্যান্ড অ্যান্ড বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন হেল্ড ফর সেল’ দেখানো সত্বেও ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা দেখিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি।
এছাড়া, বিডিওয়েল্ডিংয়ের স্থায়ী সম্পদ, মজুদ পণ্য, দেনাদার, ডেফার্ড ট্যাক্স নিয়ে নিরীক্ষকের আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই সব সম্পদের বিষয়ে কোনো প্রমাণ সরবরাহ না করার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। এতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে সম্পদের অসত্য তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারে বলে মনে করছে কমিশন। এছাড়া, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩২ লঙ্ঘন করে প্রিলিমিনারি ব্যয়, আইপিও ব্যয়, আয়ের অবরাদ্দকৃত ব্যয়, সুদ ইত্যাদিকে বিলম্বিত ব্যয় (ডেফার্ড এক্সপেন্স) হিসেবে দেখিয়েছে। আর কোম্পানিতে অদাবিকৃত ৩৩ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড থাকলেও তা দেওয়ার সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
এদিকে, কোম্পানিটিতে ৬৮.৯৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়াকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক ও অপ্রত্যাশিত বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,
পুঁজিবাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বিভিন্ন দুর্বল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। নানা কারণে বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম নেই, এমন কোম্পানিগুলোকে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিডি ওয়েল্ডিং। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি।
এসএমজে/২৪/রা