পতনের বাজারে আবার সেই রাইট শেয়ার!

এম এইচ রনি:

দিন দিন পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজারে। গত কয়েক বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের পুঁজিবাজার। এ অবস্থাও বাজারে নতুন করে রাইট শেয়ারের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। বাংলোদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)এমন সিদ্ধান্তে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এমনটাই মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর কমিশনের ৬৯৮তম সভায় গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রোকে ৩R৪ অর্থাৎ বিদ্যমান চারটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে তিনটি রাইট শেয়ারের অনুমোদন দেন। কোম্পানিটি ৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৩৪২টি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪২০ টাকা সংগ্রহ করবে। অথচ অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী যতগুলো কোম্পানি রাইট শেয়ারের মাধ্যমে পুঁজিবার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে তার মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানিই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও ডেল্টা স্পিনার্স লিমিটেড।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে এক কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে পুনরায় বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের একটা রাইট শেয়ার ইস্যু করা হয়। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ধরা হয় ১৫ টাকা। তখন কোম্পানিটি ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। অথচ তালিকাভুক্তির পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদান করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বরং শুরু থেকে অথাৎ ২০১১ সাল থেকেই কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদেরকে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। বর্তমান শেয়ার দর ১ টাকা ৪০ পয়সা নেমে এসেছে।পরিচালকদের কাছে মাত্র ৪.১৬ শতাংশ শেয়ার রেখে বাকি ৭১.২২ শতাংশ শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে সব ধরনে ব্যবসা বন্ধ রেখেছে কোম্পানিটি।কয়েকদিন পর এ কোম্পানিটির হদিস পাওয়া যাবে না বলে ধারণা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।    

রাইট শেয়ারের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করার পর অনিয়মে জড়িয়ে পড়া আরেক কোম্পানি হচ্ছে ডেল্টা স্পিনার্স লিমিটেড।

১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি তৃতীয় দফায় ২০১৪ সালের এপ্রিলের ১ তারিখ কমিশনের ৫১৪তম সভায় বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেয়।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ডেল্টা স্পিনার্স লিমিটেডকে বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের ৫১৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডেল্টা স্পিনার্সকে নয় কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৬০০টি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৯১ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাইট শেয়ার ছেড়ে সংগৃহীত অর্থে বর্তমান স্পিনিং মিলের ভারসাম্য রক্ষা, আধুনিকীকরণ, যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপন ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই); পণ্য বহুমুখীকরণ এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আংশিক পরিশোধ করবে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ কোম্পানিটি রাইট ইস্যুর অর্থ সংগ্রহের পর থেকে শুরু করে দেয় অনিয়ম। রাইট ইস্যুর পর থেকে কোন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি বিনিয়োগকারীদের। শুধু ২০১৬ ও ২০১৭ দু বছর স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। তাছাড়া ডিভিডেন্ড না দেয়ায় জেড ক্যাটাগরিতে অর্ন্তভুক্ত হওয়া, মাত্র ১৮ শতাংশ শেয়ার পরিচালকদের কাছে রেখে বাকি ৬৫ শতাংশ শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে রাখাসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে কোম্পানিটি।বর্তমানে এর শেয়ার দর মাত্র ৪ টাকা ২০ পয়সা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারের এ অবস্থায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কিভাবে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবো তার কোন দিকনির্দেশনা না দিয়ে উল্টো রাইট শেয়ার অনুমোদন দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একই প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এসব কোম্পানি আগে থেকেই প্লান করে বাজারে প্রবেশ করে। তারাই আইপিওর মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ করে, পরবর্তীতে এসে রাইট ইস্যুর মাধ্যমে তার চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ সংগ্রহ করে। এক সময় এস কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মত হারিয়ে যায়। পরিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এইযে গোল্ডেন হার্ভেস্ট কোম্পানিটি ২০১৩ সালে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পরে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। পরিশেষে এসে ৪টি শেয়ারের বিপরীতে ৩টি শেয়ার অর্থাৎ চারটির বিপরীতে একটিও না, তার চেয়ে কম শেয়ার দিয়ে প্রায় ৯০ কোটি টাকার মতো তুলে নিচ্ছে। কোম্পানিগুলো আমাদের শুধু কাগজ দিচ্ছে। তা ছাড়াতো আর কিছু না। বিনিময়ে তুলে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এক সময় এ কোম্পানিটিও হারিয়ে যাবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিভাবে রাইট শেয়ার অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

Tagged