তিন বছর আইপিও চান না বিনিয়োগকারীরা

এম এইচ রনি:

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, বাইব্যাক আইন পাশসহ আগামী ৩ বছর পর্যন্ত সব ধরনের আইপিও, রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধই হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম দাবি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবিও জানান  বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা।

গত ২৯ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতা কর্মীরা ২১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন ।

১. বাইব্যাক আইন পাশ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইস্যুমুল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো নিজ নিজ কোম্পানিকে ইস্যুমুল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।

২. পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে আগামী ৩ বছর পর্যন্ত সকল ধরনের আইপিও, রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ করতে হবে। প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সকল কমিশনারদের অপসারণ করে সৎ, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন পুন:গঠন করতে হবে বলে দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী এসএমজে২৪ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে লাগামহীন পতনে আমরা দিশেহারা। তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বর্তমান বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সকল কমিশনারদের পদত্যাগ করতে হবে, ডিএসইর পরিচালনা পষদ পুনর্গঠন করতে হবে। এছাড়া বাইব্যাক আইন পাশসহ আগমী তিন বছর কোন প্রকার আইপিও অনুমোদন দেয়া যাবে না। তা হলে এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব। একই প্রসঙ্গে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক এসএমজে২৪ ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে যে পরিস্থিতী তৈরি হয়েছে তাতে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের অধেক ফিরে পাবো কিনা তাও জানি না। বাজার স্থীতিশীলতার লক্ষ্যে আমরা মাঝে মাঝে মানববন্ধন করি। আমরা মানববন্ধনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করি। এতেও ডিএসসির কর্মকতাদের সমস্যা। আমরা যেন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন করতে না পারি তাই তারা আমাদের বিরুদ্ধ্যে মামলা করেছে। বিএসইসির কমিশনারদের পদত্যাগ ও ডিএসইসির পরিচালনা পষদ পুনর্গঠন করা হোক। এছাড়া বাইব্যাক আইন পাশসহ আগামী তিন বছর যেনো কোন আইপিও অনুমোদন না দেয়া হয়।

বিনিয়োগকারীদের দাবি মধ্য রয়েছে- ০১. বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সকল কমিশনারদের অপসারণ করে সৎ, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন পুন:গঠন করতে হবে।

০২. পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ক্যাসিনো মার্কেটের মতো বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিবি ও বিভিন্ন ইস্যু ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

০৩. বাইব্যাক আইন পাশ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইস্যুমুল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো নিজ নিজ কোম্পানিকে ইস্যুমুল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।

০৪. পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে আগামী ৩ বছর পর্যন্ত সকল ধরণের আইপিও, রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ করতে হবে। প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।

০৫. বুক বিল্ডিং পদ্ধতি, ডাইরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

০৬. ২ সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যে সকল কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২%, সম্মিলিতভাবে ৩০% শেয়ার নেই, ঐ সকল উদ্যোক্তা পরিচালক ও কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ধারণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

০৭. কোম্পানি আইনে কোথাও জেড ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেটের কথা উল্লেখ নেই। তাই শেয়ারের কোন বিভাজন করা যাবে না। ওটিসি মার্কেটে যে সকল কোম্পানি নিয়মিত এজিএম করে এবং ডিভিডেন্ড দেয় তাদেরকে মূল মার্কেটে ফেরত আনতে হবে। যে সকল কোম্পানি এজিএম করে না, কোম্পানি বন্ধ আছে, সেই সকল কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

০৮. কোম্পানির ব্যবসা ভালো থাকা সত্ত্বেও যে সকল কোম্পানি নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে, সে সকল কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

০৯. কোন কোম্পানিকে ডি-লিস্টিং করা যাবে না। সম্প্রদি ডি লিস্টিং হওয়া মডার্ন ডাইং ও রহিমা ফুড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

১০. কোন কোম্পানির বোর্ড মিটিংয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যেই এজিএম করতে হবে। দুই আড়াই মাস পরে নয়। পৃথিবীর কোন দেশেই দুই আড়াই মাস পরে এজিএম করার নিয়ম নেই।

১১. পুঁজিবাজার উন্নয়নের স্বার্থে বহুজাতিক লাভজনক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মতো বাধ্যতামূলকভাবে তাদের বিনিয়োগের ৪৯% পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের কোম্পানির স্বল্প কিছু শেয়ার (২০-২৫%) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে ৩০০ থেকে ৪০০% ডিভিডেন্ড দিয়ে এদেশের অর্থ বিদেশি কোম্পানিগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। এই লুন্ঠন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।

১২. পুঁজিবাজারের প্রাণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে বাজারে সক্রিয় করে তাদের সঞ্চিত অর্থের ৮০% পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।

১৩. যে সমস্ত কোম্পানি তার মূলধন সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসবে ঐ সমস্ত কোম্পানিকে পেইডআপ ক্যাপিটালের ৪০% পর্যন্ত আইপিও অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তাদের কোম্পানি প্লেসমেন্ট শেয়ারের টাকা কোন প্রকারেই কোম্পানির পেইডআপ ক্যাপিটাল হিসেবে দেখাতে পারবে না এবং কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার একমাস পূর্বে কোম্পানির প্রসপেক্টাস সমস্ত ব্রোকারেজ হাউজ, ডিএসই,সিএসইতে পাঠাতে হবে। সাংবাদিকদের এবং বিনিয়োগকারীদের চাহিদামাত্র কোম্পানি প্রসপেক্টাস দিতে বাধ্য থাকবে।

১৪. পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধির জন্য সহজশর্তে অর্থাৎ ৩% সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। যা আইসিবি, বিভিন্ন মার্চেন্ট ও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে ৫% হারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোন হিসাবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

১৫. খন্দকার ইব্রাহীম খালেদের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী শেয়ারবাজর লুন্ঠনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬. ঢাকা এক্সচেঞ্জের বিপরীতে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ নামে বিকল্প স্টক এক্সচেঞ্জ করতে হবে।

১৭. বিনিয়োগকারীদের “বিনিয়োগ নিরাপত্তা আইন” অতিদ্রুত প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৮. বাজারের ভয়াবহ পতনে ২০১০-২০১১ সাল পর্যন্ত যে সকল বিনিয়োগকারীরা অসুস্থ হয়ে, হার্টঅ্যাটাক করে আত্মহুতি দিয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

১৯. পুঁজিবাজারের এই ক্রান্তিলগ্নে মার্জিন ঋণে জর্জরিত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এই মুহূর্তে মার্জিন ঋণের আওতাভুক্তদের সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ করতে হবে।

২০. ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে। ইতিপূর্বে অর্থ মন্ত্রনালয় ও বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত যে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃক ফোর্স সেল ও ট্রিগার সেলের শিকার হয়েছেন  সে সমস্ত বিনিয়োগকারীর কোডে বিক্রিকৃত মূল্যে শেয়ার ক্রয় করে দিতে হবে।

২১. পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের জীবন মান রক্ষা ও পুঁজিবাজার রক্ষার যৌক্তিক আন্দোলন করতে গিয়ে “বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ” এর নেতাকর্মী বিনিয়োগকারীদের ওপর গ্রেফতার, হামলা, মামলা, গোয়েন্দা নজরদারী এবং মুচলেকা নেওয়াসহ সব রকমের হয়রানী বন্ধ করতে হবে। যা অদ্যাবধি বলবৎ অবস্থায় রয়েছে।

Tagged