ইতিহাস গড়ে সূচকের রেকর্ড উত্থান

এসএমজে ডেস্ক

দেশের শেয়ারবাজারে গত বৃহস্পতিবার ইতিহাস সৃষ্টি করে সূচকের রেকর্ড উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন রেকর্ড ৩০৬ পয়েন্ট বা প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ৮৬২ পয়েন্ট বা সাড়ে ৫ শতাংশ।

ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চালু হয় ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এরপর বৃহস্পতিবার এক দিনে সূচকটির সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২৫ পয়েন্ট। প্রায় সাড়ে চার মাসের মধ্যে এটিই এ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে গত ২১ মার্চ ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৪২ পয়েন্ট।

গত সোমবার দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে শেয়ারবাজারে চাঙাভাব ফিরেছে। গত তিন কার্যদিবসে লেনদেনের পাশাপাশি সূচকের বড় উত্থান ঘটেছে। সব মিলিয়ে ডিএসইএক্স সূচকটি ৬৯৬ পয়েন্ট বা ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এক দিনেই বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে শেয়ারবাজারের সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ব্যক্তিশ্রেণির নিষ্ক্রিয়তায় অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাতে লেনদেনে গতি ফিরেছে।

ঢাকার বাজারে বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ভালো শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সূচক ও লেনদেনের এই উত্থানে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে সূচকের রেকর্ড উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি), ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বীকন ফার্মা, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের। এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতেই ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ১২৮ পয়েন্ট।

এমন এক সময়ে শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে সূচকের বড় উত্থান ঘটছে যখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার মধ্যেই শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের সুদিন ফিরছে। অথচ দুই বছরের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে দুর্বল, মানহীন ও বন্ধ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো।

বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের সময় থেকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের যে স্বাভাবিক চরিত্র সেটা নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সময়ে এসে সেটি আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। ভালো শেয়ারের বদলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কারসাজির দুর্বল ও নিম্ন মানের কোম্পানিগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের বদলে যাওয়া বিনিয়োগের সেই চরিত্রেও কিছুটা বদল এসেছে। ফলে ভালো শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।

Tagged