৬ হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নামলো সূচক

এসএমজে ডেস্ক

দেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপত চলছেই। প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্য সূচক। এতে সূচকের ৬ হাজার পয়েন্টের যে মনস্তাত্ত্বিক সীমা ছিল সেটিরও নিচে নেমে এসেছে সূচক।

শেয়ারবাজার টানা দরপতনের মধ্যে পড়ায় দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততো ভারী হচ্ছে। আতঙ্কে অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। ফলে দরপতন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন হওয়াকে অস্বাভাবিক বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাজারে ছড়িয়ে পড়া কিছু গুজব এবং জেড গ্রুপ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা এই দরপতনের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তারা।

তারা বলছেন, শেয়ারবাজার যখন ইতিবাচক ধারায় ফিরছিল ঠিক সেই সময় বিএসইসির নির্দেশে কিছু কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। মা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের পেনিক সৃষ্টি করে। এরপরও আরও কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে গুজব ছড়ায় বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সবকিছু মিলে শেয়ারবাজার দরপতনের মধ্যে পড়েছে।

গত কয়েক কার্যদিবসের মতো সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ১৮ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের। এমন টানা দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১২টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ২২২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩০০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সূচকের এই পতনের বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টকে আমরা মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট ধরে নেয়। কিন্তু আজ সূচক সেই ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা পেনিক হয়ে পড়েছে। তারা বিক্রি চাপ বাড়ানোর কারণেই এই দরপতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজার যখন ইতিবাচক ধারায় ফিরছিল সেই সময় কিছু কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল মারাত্মক ভুল। এরপর বাজারে আরও কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এক ধরনের বিক্রির চাপ আসে। পাশাপাশি রোজার কারণেও কিছুটা বিক্রির চাপ আসে। আমরা ধারণা করছিলাম রোজার শুরুতে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, কিন্তু বাস্তবে দেখছি দরপতন অব্যাহত রয়েছে।

ডিএসইর আর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। কিছু গুজব বা গুঞ্জনের কারণে এই দরপতন হতে পারে। তবে আমি মনে করি এই দরপতনের জন্য মূলত বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ মূল দায়ি। বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ কমালে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

বিনিয়োগকারী আতাউর রহমান বলেন, বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে বাজারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। ফলে অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। এই কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ করা শেয়ারের দাম প্রতিদিনই কমছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। গুঞ্জন শুনছিলাম সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নামবে না। এখন তো সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এখন সূচকের পতন কোথায় গিয়ে গিয়ে ঠেকে সেটাই দেখার বিষয়।

জুয়েল নামের আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, প্রতিদিন ভাবি আজ বাজার ভালো হবে। কিন্তু বাজার তো ভালো হচ্ছে না। প্রতিদিনই শেয়ারের দাম কমছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পরিমাণ ততো বাড়ছে। এই লোকসান থেকে বের হওয়ার কোনো পথ দেখছি না।

এদিকে সবকটি মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৮০ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং সিরামিকসের ২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২০ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এস এস স্টিল, ওরিয়ন ইনফিউশ, গ্রামীণফোন, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং মুন্নু ফেব্রিক্স।

Tagged