ফার্স্ট ফাইন্যান্সের লভ্যাংশ না দেয়ার কারণ খতিয়ে দেখবে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চার বছরের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দিচ্ছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণ খতিয়ে দেখবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতার কারণে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। আর এসব অসঙ্গতির বিষয়ে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতার কারণ জানতে চেয়েছে বিএসইসি। গত ৩ নভেম্বর কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। আর ১১ নভেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বলে জানা গেছে।

তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ২ মে থেকে ফার্স্ট ফাইন্যান্স জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। দীর্ঘ সময় জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছেন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। এছাড়া কোম্পানিটি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতেও ব্যর্থ হয়েছে। আর ২০০৩ সাল থেকে টানা ১৭ বছর ফার্স্ট ফাইন্যান্স শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। আর কোম্পানিটির টানা ২ বছর নিট অপারেটিং লোকসান হয়েছে যথাক্রমে ২৯ কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

একইসঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না এবং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স। কোম্পানিটির ব্যর্থতার কারণে ২০১৪ সাল থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৯৬ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং কোম্পানি সচিবকে এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিষয়ে ব্যাখ্যার পাশাপাশি বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে- ফার্স্ট ফাইন্যান্সের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অথবা নিরীক্ষিত/অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন; বর্তমান আর্থিক অবস্থার বিবরণ; বর্তমান সম্পদের (জমি, ভবন, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য) বিবরণ; সব উদ্যোক্তা পরিচালকদের বর্তমান শেয়ারধারনের তথ্য; প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), পুনঃপ্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আরপিও) ও রাইট ইস্যুর প্রসপেক্টাস, আইপিও, আরপিও ও রাইট ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহারের তথ্য, সর্বশেষ ব্যাংক ঋণের তথ্য এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণসহ ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনার তথ্য।

প্রসঙ্গত, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের শুধুমাত্র বোনাস লভ্যাংশই দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের কোম্পানিটির রাইট শেয়ার ছেড়েও অর্থ সংগ্রহ করে।

১১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ২৫৮টি। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৪.২১ শতাংশ শেয়ার। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২৪.৪৮ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪১.৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার রোববার (১৫ নভেম্বর) সর্বশেষ ৭.১০ টাকা লেনদেন হয়েছে। সূত্র: বিএসইসি

এসএমজে/২৪/রা

Tagged