নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার অভিযোগ তুলেছে প্রতিষ্ঠানটিরই সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করা কর্মকর্তারা সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
দীর্ঘদিন ডিএসইতে কাজ করার পরেও সেসব কর্মকর্তাদের কারণে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। সম্প্রতি ডিএসইতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হোম ঋণ প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সুধু নিজেদেরই স্বার্থ রক্ষা করতে চাওয়া কর্মকর্তারা সে বিষয়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। তারা ছাড়া অন্য সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ঋণ নিতে না পারে সে বিষয়ে উঠে পরে লেগেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের প্রধান এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দ্বন্দ্ব থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির ভালো মানের বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্ট থাকা সত্ত্বেও এর ভিতরে অনিয়ম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। পজিশন চাকরির বয়স, কাজের মান অনুযায়ী কম বা বেশি। কিন্তু কেউ পাবে আর কেউ পাবে না এটা তো হতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের যেমন প্রয়োজন তেমনি সবার নিচে যে কর্মচারী তারও প্রয়োজন রয়েছে। তাই ডিএসইর বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্টকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও আস্থা রক্ষায় তাদের নিজেদের মধ্যে অবশ্যই সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর এক কর্মকর্তা শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, বর্তমানে ১০ থেকে ১৩ জন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন। সেক্ষেত্রে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতি করে হলেও সে কাজ করে থাকেন। ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসেবে সবারই সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে
পজিশন, চাকরির বয়স, কাজের মানের উপর ভিত্তি করে বা বেশি হতে পারে। কিন্তু তাই বলে তো তারা নিজেদের বাদে সবাইকে বঞ্চিত করতে পারে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ওই কর্মকর্তাদের কারণে আমাদের বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বন্ধ আছে। কিন্তু তারা ঠিকই সেসব ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। আমাদের ক্ষেত্রে এসে নানা ধরনের সমস্যা ও অজুহাত দেখানো হয়। এদের কারণে বেতনও ঠিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে আরো এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর আমাদের সবার হোম ঋণের বিষয়ে আলোচনা করে ডিএসই বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্ট। পরে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঋন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু আলোচিত কর্মকর্তারা সে বিষয়ে ব্যাঘাত ঘটায় এবং এর বিপরীতে অবস্থান নেয়। তারা নিজেদের বাদ রেখে বাকিদের যাতে ঋণ না দেয়া হয় সে বিষয়ে জোর করে।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে এ বিষয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা করা হয়। এক দুজন কর্মকর্তা সবাই যাতে ঋণ পায় সে বিষয়ে জোর দেয়। কিন্তু আলোচিত কর্মকর্তাদের কারণে বিষয়টি নিশ্চিত হয় না।
তাদের বিষয়ে বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্টের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্ট তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বরং তারা যে বিষয়ে জোর করে তাদের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সকল কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন ম্যানেজম্যান্টেও আছে। তারা পজিশন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্ট কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই। এতে বোর্ড ও ম্যানেজম্যান্টের কোনো স্বার্থ আছে কিনা সেটাও জানা নেই। তবে সে সকল কর্মকর্তাদের কারণে ডিএসইর বাকি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ডিএসই সুশাসনের বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির ভিতরে সুশাসন নেই বলেই দাবি করেন বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই। ক্ষমতা ও পজিশনের অপব্যবহারই বেশি দেখা যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই। তাই বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন দ্রুত যদি ডিএসইর সুশাসন নিশ্চিত না করা হয় তবে এর সাথে সম্পৃক্ত সবাই বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এসএমজে/২৪/রা