ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি
ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সোলার পাওয়ার ফেন্সিং (বৈদ্যুতিক তারের বেড়া) ও বায়োলজিক্যাল ফেন্স (লেবু ও বেত প্রজাতির বাগান) কাজে আসছে না। স্থানীয়দের দাবি, সোলার পাওয়ার ফেন্সিংয়ে ব্যবহৃত ব্যাটারিগুলো নিম্নমানের হওয়ায় নির্মাণের চার মাসের মাথায় ব্যাটারি অকেজো ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারের প্রায় কোটি টাকা অপচয়ের আশঙ্কা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ২০-২৫টি বন্যহাতির দল ভারতের আসাম থেকে দলছুট হয়ে গারো পাহাড়ে ঢুকে পড়ে। সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় হাতিগুলো আবাসস্থলে ফিওে যেতে পারেনি। সেই হাতির সংখ্যা এখন একশ ছাড়িয়েছে। ধান ও কাঁঠাল পাকার সময় লোকালয়ে হাতির উপদ্রব বাড়ে। বন্যহাতির উপদ্রæব থেকে বাঁচতে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর আদলে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বিশ্বব্যাংকের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার সীমান্তে ১১ কিলোমিটার ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তে ২ কিলোমিটার সোলার পাওয়ার ফেন্সিং নির্মাণ ও বায়োলজিক্যাল ফেন্স করে বনবিভাগ। নির্মাণের পর চার মাস সুফল ভোগ করলেও বর্তমানে প্রকল্পটি আর কাজে আসছে না।
১৪মার্চ (শনিবার) সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের ছোট গজনী এলাকা এবং তাওয়াকুচা এলাকায় নির্মিত সোলার পাওয়ার ফেন্সিংয়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে ও ঝঁলা বেঁধে তাতে পাহাড়ি লতা-পাতায় আঁকড়ে ধরে আছে। আবার অনেক সোলার পাওয়ার ফেন্সিংয়ে ব্যবহৃত খুঁটির সঙ্গে তারের কোনো অস্তিত্ব নেই, অন্যান্য যন্ত্রপাতিও মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের তাওয়াকুচা গ্রামের পনির আহম্মেদ (৩০) বলেন, সোলার পাওয়ার ফেন্সিং ও বায়োলজিক্যাল ফেন্সিং প্রকল্পে নি¤œমানের ব্যাটারি ব্যবহৃত হওয়ায় সোলারের বেড়া কাজ করে না। ফলে এ তারের বেড়া অকোজো হয়ে আছে।
ওই ইউনিয়নের ছোটগজনী গ্রামের নরবাদ মারাক বলেন, এহন বাড়ি-ঘরে হাতি আহে না, পাহাড়ে ভেতরে অবস্থান করছে। এই যে আম, কাঁঠাল মৌসুম আইতেছে, তহন বাড়ি-ঘরে হাতি আইএ অত্যাচার করবে।
কাংশা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সোলার ফেন্সিং একেবারে অকোজো। সরকারের কোটি টাকা অকোজো হয়ে পড়ে আছে।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) প্রাণতোষ রায় বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তা রক্ষণাবেক্ষণে লোক নিয়োগ দেয়নি। সোলার পাওয়ার ফেন্সিং তদারকির জন্য একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকলে সে রেগুলার সমস্যাগুলো চিহিৃত করতে পারত। তারে লতাপাতা জড়ালে বা ডালপালা পড়ে থাকলেও তা পরিস্কার করতে পারত। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় সোলার পাওয়ার ফেন্সিং চালুর জন্য আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন এ বন বিভাগের এ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, সোলার পাওয়ার ফেন্সিং এবং এর যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে পরিচালনা না করার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা আমাদের নজরে এসেছে, এটাকে মেরামত করে পুনরায় চালু করার বিষয়ে ভাবছি। আশা করছি খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ব্রেকিং নিউজ :