এমএইচ রনি:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যেসব কোম্পানি ১ বছরের বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে, সেগুলোর বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ আগামী ৬ মাসের মধ্যে পুনর্গঠন করে ২৪ মাসের মধ্যে কোম্পানির অপারেশনাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স উন্নত না করতে পারলে তখন আইন অনুযায়ী কোম্পানিকে মার্জার অথবা বিলুপ্ত বা অবসায়ন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
জানা যায়, যেসব কোম্পানি ১ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে সেগুলোর জন্য প্রযোজ্য কমিশনের ২০০২ সালের নোটিফিকেশনের ওপর আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিলের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির পরিচালক মো. মনসুর রহমান- আহবায়ক, উপ-পরিচালক শেখ মো. লুৎফুল কবির-সদস্য এবং উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম-সদস্য সচিব। গত ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিশনের ৬৮২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব কোম্পানি ১ বছর বা তার বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে সেগুলোর জন্য প্রযোজ্য কমিশনের ২০০২ সালের নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, কোম্পানি ১ বছর কিংবা তার বেশি সময় জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে সেগুলোর পরিচালনা পর্ষদ আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) মাধ্যমে পুনর্গঠন করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত ইজিএম হওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে শেয়ারহোল্ডারদের নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে এবং একটি বাংলা অপরটি ইংরেজিসহ দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তা প্রকাশ করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে নতুন পরিচালক কোম্পানির স্পন্সর, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে গ্রæপিং হয়ে নির্বাচিত হবে। ইজিএম অবশ্যই অবাধ এবং স্বচ্ছ হতে হবে।
পরিষদ পুনর্গঠিত হওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানির ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি; সেটা যদি পরিচালক কিংবা অডিটরও হয় তাকে চিহ্নিত করবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোম্পানিকে মুনাফায় ফেরানোর জন্য পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ অপারেশনাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাগ্রহণ করবে।
যদি পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ২৪ মাসের মধ্যে কোম্পানির অপারেশনাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স উন্নত না করতে পারে তখন আইন অনুযায়ী কোম্পানিকে মার্জার অথবা বিলুপ্ত বা অবসায়ন করা হবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৪২টি রয়েছে জেড ক্যাটাগরিতে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানি গত ৫ থেকে ৭ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে জেড ক্যাটাগরিতে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ১. এবি ব্যাংক ২. অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৩. আরামিট সিমেন্ট ৪. বাংলাদেশ সার্ভিসেস ৫. বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ৬. বীচ হ্যাচারী ৭. বিআইএফসি ৮. বেক্সিমকো সিনথেটিক্স ৯. সিএন্ডএ টেক্সটাইলস্ ১০. ঢাকা ডাইং ১১. ডেলটা স্পিনাস ১২. দুলামিয়া কটন ১৩. এমারেল্ড অয়েল ১৪. ইভিন্স টেক্সটাইল ১৫. ফারইস্ট ফাইন ১৬. ফার্স্ট ফাইন ১৭. জিবিবি পাওয়ার ১৮. গোল্ডেন সন ১৯. আইসিবিআই ব্যাংক ২০. ইনফর্মেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ২১. ইমাম বাটন ২২. কেয়া কসমেটিক্স ২৩. জুট স্পিনার্স ২৪. খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকাজিং ২৫. মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ২৬. মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ ২৭. মিঠুন নিটিং এন্ড ডাইং ২৮. নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং ২৯. পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩০. পিপলস লিজিং ৩১. প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২. প্রগ্রেসিভ লাইফ ৩৩. সমতা লেদার কমপ্লেক্স ৩৪. সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ ৩৫. শ্যামপুর সুগার মিল ৩৬. সোনারগাঁ টেক্সটাইল ৩৭. শাইন পুকুর সিরামিক্স ৩৮. সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩৯. তাল্লু স্পিনিং মিলস ৪০. তুং হাই নিটিং ৪১. ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ৪২. জিল বাংলা সুগার মিলস্
বিএসইসর সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানির স্পন্সর পরিচালকদের শেয়ারহোল্ডিং ৫০ শতাংশের কম রয়েছে সেগুলোর পুন:গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্পন্সর পরিচালক গ্রুপের মধ্য থেকে নির্বাচিত হতে পারবে না। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেশনাল বিবেচনায় নিয়োগকৃত হবেন।
পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদে কারা পরিচালক হতে পারবে না সে বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির সাবেক এক্সিকিউটিভ, সাবেক স্ট্যাচুটরি অডিটর অথবা কোম্পানির অডিটরের সঙ্গে ব্যবসা কিংবা প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে অথবা কনসালট্যান্ট, কোম্পানির বিক্রয় বা ক্রয়ে ১০ শতাংশ অবদান রয়েছে এমন কোনো কাস্টমার অথবা সাপ্লাইয়ার, বর্তমান পরিচালক-স্পনসর অথবা কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসএমজে ২৪ ডটকমকে জানান, জেড ক্যাটাগরিতে যেসব কোম্পানি ১ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার কার্যক্রম চলছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।