ক্যাটাগরি নির্ধারণে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বিএসইসি

এসএমজে ডেস্ক

পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ প্রদানের হার এবং কোম্পানির ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ বা চালুর ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ক্যাটেগরি নির্ধারণের নতুন নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি এমন শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তির সময় বিদ্যমান পাঁচ দিনের পরিবর্তে চার দিনে (টি+৩) নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে।

গত ৩০ নভেম্বর এ নির্দেশনা জারি করে সংস্থাটি।  তবে বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার। আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে বিএসইসি জানিয়েছে। নির্দেশনা জারির তিন মাস পর কার্যকর নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, এ নির্দেশনার ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে নিয়মে শেয়ারের ক্যাটেগরির উন্নতি বা অবনমন হতো, সেই নিয়ম আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফেরত আসবে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের সেটেলমেন্ট অ্যান্ড ট্রানজেকশন রেগুলেশনস অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার তাৎক্ষণিকভাবে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমন করতে পারবে। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশনাবলে যেসব কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে এর আগে অবনমন করা যায়নি, সেগুলোকে এখন  করা যাবে। এ ছাড়া যেসব কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নামবে, সেগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা কমিশনের পূর্বানুমোদন ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মূল প্ল্যাটফর্ম বা ব্লক মার্কেট অথবা প্ল্যাটফর্মের বাইরেও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে না।

ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৫৪ কোম্পানির সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটেগরিতে কেনাবেচা হচ্ছে এমন অন্তত ৫৯ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমন হতে পারে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ার ১৬টি, ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার ৪২টি এবং ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ার একটি।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বিশেষত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কোনো কোম্পানির শেয়ারের ক্যাটেগরি পরিবর্তন, বিশেষত ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটেগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবনমন একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এ-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনও বড় মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। এমন পরিবর্তন তাৎক্ষণিক হওয়ার কথা। তিন মাস পর কার্যকর হওয়ার নির্দেশনাটি প্রশ্নবিদ্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, জেড ক্যাটেগরিতে অবনমন বিষয়ে যে নির্দেশনা গতকাল বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে এটি জারির সময় ৩০ নভেম্বর উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে দুই দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে। ফলে কেউ এ তথ্য আগাম জেনে কোনো সুবিধা নিয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পরপর দুই বছর কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ না দিলে, ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকলে ওই কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নামানোর নিয়ম ২০২০ সালেই সঠিক ছিল। এখন কেন এটি পরিবর্তন করছে, তা বোধগম্য নয়।

যেসব শেয়ারের ক্যাটেগরি পরিবর্তন হতে পারে

বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে থাকা যেসব শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নামতে পারে সেগুলো হলো– অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, বে-লিজিং, ফরচুন সুজ, জিএসপি ফাইন্যান্স, কাট্টলী টেক্সটাইল, ল্যুবরেফ, ম্যাকসন্স স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, নিউ লাইন ক্লোথিংস, ফনিক্স ফাইন্যান্স, রহিম টেক্সটাইল, রেনউয়িক যজ্ঞেশ্বর, রিংশাইন, রানার অটোমোবাইলস, সায়হাম কটন এবং সায়হাম টেক্সটাইল। ‘বি’ থেকে জেডে নামতে পারে অলটেক্স, আনলিমা ইয়ার্ন, আরামিট সিমেন্ট, এটলাস বাংলাদেশ, আজিজ পাইপস, বিবিএস, বিডি থাই ফুড, সেন্ট্রাল ফার্মা, ডেল্টা স্পিনার্স, ফার কেমিক্যাল, এফএএস ফাইন্যান্স, ফু-ওয়াং ফুড, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, ইন্দোবাংলা ফার্মা, ইনটেক, কেয়া কসমেটিক্স, খান ব্রাদার্স পিপি, খুলনা প্রিন্টিং, লিবরা, মেট্রো স্পিনিং, মিরাকল, ন্যাশনাল ব্যাংক, ন্যাশনাল ফিড, ন্যাশনাল টি, ন্যাশনাল টিউবস, ওইম্যাপ, অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ডেনিম, পদ্মা লাইফ, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম লাইফ, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রূপালী ব্যাংক, সাফকো স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ডাইং, পেনিনসুলা, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এবং এন ক্যাটেগরির ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

Tagged