গভর্নরের অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বাড়ল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে সংসদে বিল পাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২০ নামে বিলটি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর পক্ষে পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে। শুরুতেই বিল পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। এরআগে বুধবার (৮ জুলাই) বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়।

বিলটি জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্না, পীর ফজুলুর রহমান বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ এবং রুমিন ফারহানা।

জনমত যাচাই ও বাছাই করার প্রস্তাবের ওপর তারা আলোচনা করেন পরে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে পাস হয়। এখন এই বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে কার্যকর হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবসরের বয়স ৬৫ বছর থেকে ৬৭ বছরের উন্নীত হলো।

জনমত যাচাই বাছাই নিয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের অর্থ ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় স্তম্ভ। আমাদের অর্থ ব্যবস্থা কি পরিমাণে দাঁড়িয়েছে যারা আলোচনা করেছেন তারা জানেন। তারা প্রশ্ন করেছেন সময় বাড়ানোর প্রস্তাব কেন আসছে, আগে কেন করা হলো না। এইভাবে যদি বিচার করা হয় তাহলে সঙ্গত হবে না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের বিশাল ব্যাপ্তি তার সঙ্গে তুলনা করে সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করতে হবে। তারা নিশ্চই অপূরণীয় নিয়ম চান না।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের গভর্নর যারা ছিলেন তারা সকলেই অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন, প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ছিলেন এবং এমনকি সরকারি কর্মচারীদের আগে বয়স ছিল ৫৭ বছর আমরা যখন চাকরি করতাম তখন ৫৭ ছিল এখন সরকার পরিবর্তন করে ৫৯, ৬০ করেছে। বিচারপতিগণের ৬৭ বছর পর্যন্ত উপভোগ করছে সুতরাং সময়ের পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে, অনেক বেশি নতুন নিয়ম কানুন আসছে এটার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে গিয়ে আইন কানুন পরিবর্তন করতে হয়। এটাই প্রথম আইন না। জীবন্ত সরকার সময় সময় রিঅ্যাডজাস্ট করে চলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যগণ যুক্তি সঙ্গ কথা বলেছেন। তার চেয়ে আরও বেশি যুক্তিসঙ্গত হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতায় যে ধরনের গভর্নর প্রয়োজন তার যে অভিজ্ঞতার দরকার তার যে শিক্ষার দরকার তার জন্য যে প্রজ্ঞতার প্রয়োজন এগুলো বিচার করেই আমরা এই ব্যক্তিকে, এটা কোন ব্যক্তির বিষয় না, গভর্নর পোস্টের কথা বলেছি। এটা শুধু এর জন্য না। এখন থেকে যারা গভর্নর হবেন এই সংসদ পুনরায় পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এই ৬৭ থাকবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর আর্টিকেল ১০ এর (৫) এর শর্তাংশ অনুযায়ী গভর্নর এর কার্যকাল বা মেয়াদ ৪ বছর এবং তাকে পুনর্নিয়োগ করা যাইবে। তবে, উক্ত ক্লোজ (৫) এ উল্লেখ রয়েছে যে ৬৫ বছর বয়স পূর্তির পর কোনো ব্যক্তি গভর্নর পদে আসীন থাকিতে পারিবে না।

আরও বলা হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজস্ব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কার্যকর মুদ্রনীতি প্রণয়ন, মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যাংকের ঋণ সরবরাহ ও ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ মুদ্রামান-সংরক্ষণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সঙ্গে সমন্বয় সাধন প্রভৃতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে থাকে। দেশের সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ও উন্নতর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ববাচক গুণাবলি প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মূল নিয়ামক শক্তি বিবেচনায় উক্ত পদে যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে বিদ্যমান বয়সসীমা অপেক্ষা অধিকতর বয়সে নিয়োগের সুযোগ রাখা কিংবা প্রয়োজনবোধে উক্ত পদে সমাসীন ব্যক্তিকে বিদ্যমান বয়সসীমা অতিক্রমণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যতা অনুসারে পুনর্নিয়োগ প্রদান কিংবা উক্ত ব্যক্তির নিয়োগের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা বজায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২০ এর আর্টিকেল ১০ এর ক্লোজ (৫) এর শতাংশ সংশোধনপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৫ এর স্থলে ৬৭ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী। এখানে বলা আছে, সরকার গভর্নর পদে নিয়োগ দেবে এবং এর মেয়াদ হবে চার বছর। সরকার চাইলে মেয়াদ বাড়াতে পারবে। তবে বয়স হতে হবে ৬৫ বছরের মধ্যে।
এসএমজে/২৪/রা

Tagged