আইপিও অনুমোদনে এক্সপার্ট প্যানেল চায় বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী পাইপলাইনে থাকা কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনে আরো কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কোম্পানির প্রসপেক্টাসগুলো গভীরভাবে দেখ ভালের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নতুন করে এক্সপার্ট প্যানেল গঠনের পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি। এক্সপার্টের প্যানেলের প্রতিবদেন দেখে সস্তুষ্ট হলেই নতুন করে আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে কমিশন।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ও ডিএসই ব্রোকারের্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা এফসিএমএ, খোন্দকার কামালুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, সাইফুর রহমান, মো. আনোয়ারুল ইসলামসহ ডিএসইর চার শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, শরীফ আতাউর রহমান, মিনহাজ মান্নান ইমন, মো. হানিফ ভূইয়া ও স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক মাসুদুর রহমান এবং ডিএসই ব্রোকারের্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী।

বৈঠকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, বাজারের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে ডিএসই’র পরিচালকবৃন্দ ও ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই পরিস্থিতিতে কমিশন বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি ও ডিএসই একযোগে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, কমিশনের সঙ্গে আজ একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে বাজার আস্থা ফিরে পাবে। বাজারে এখন বিনিয়োগাকরীদের মধ্যে শুধু হাহাকার, অব্যাহত পতনে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ওপর চূড়ান্তভাবে অনাস্থা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

তিনি আরো বলেন, বাজারের সার্বিক বিষয়ে বিএসইসিকে অবহিত করেছি। কমিশন এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

সম্প্রতি যে সমস্ত আইপিও বাজারে এসেছে, সেসব কোম্পানির প্রসপেক্টাস ও আর্থিক প্রতিবেদনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম আস্থা নেই। কারণ এই ইস্যুগুলো আইপিওতে আসার আগে প্রোসপেক্টাসে যে তথ্য উপাত্ত ছিল তালিকাভুক্তির পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনতিবিলম্বে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত হাতে থাকা কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কঠিন ও কঠোরতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় মো. রকিবুর রহমান, শরীফ আতাউর রহমান, অধ্যাপক মাসুদুর রহমান এবং ডিবিএর প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী আইপিও এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরলে বিএসইসি জানায়, তারাও এসব অনিয়মের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করেছে।

এ জন্য কমিশন ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতা চেয়েছে। সে লক্ষ্যে ডিএসই বোর্ডকে একটি আইপিও পর্ববেক্ষণ প্যানেল গঠনের পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

জনাব ইমন বলেন, অচিরেই ডিএসই’র পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় অডিট ফার্মগুলোর সমন্বয়ে ডিএসই একটি আইপিও এক্সপার্ট প্যানেল গঠন করবে। আইপিওতে আসার জন্য ডিএসইতে জমাকৃত প্রসপেক্টাসসমূহ এই প্যানেলের কাছে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। তাদের প্রদানকৃত পর্যবেক্ষণ সমূহ যাচাই পূর্বক বিএসইসি আইপিও’র চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করবে।

এছাড়াও ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ কোন প্রসপেক্টাসে অসংগতি বা সন্দেহজনক তথ্য পেলে তা তাৎক্ষনিকভাবে দ্রæততম সময়ের মধ্যে বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে ডিএসই তদন্ত করতে পারবে। প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কমিশন তদন্তের অনুমোদন দেবে বলে জানান এই পরিচালক।

এছাড়াও নতুন আইপিও ও রাইট শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমিশন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে। বেশ কয়েকজন পরিচালক কমিশনকে জানান, আইপিও’র কর্মকান্ড কিছু সংখ্যক ইস্যু ম্যানেজার ও অডিট ফার্মের বৃত্তে আটকে আছে। যা বাজারের জন্য সুস্থ লক্ষণ নয়। বর্তমানে পঞ্চাশেরও অধিক মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সাইত্রিশটি নিবন্ধিত অডিট ফার্ম থাকা সত্তেও হাতে গোনা কয়েকটি ফার্মই আইপিও’র কাজ করছে। এর উত্তরে কমিশন জানায়, নিবন্ধিত থাকা সত্বেও যারা আইপিও আনতে পারছে না তাদেরকে সতর্ক করা হবে, প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন অডিট ফার্মের ওয়ার্কিং পার্টনারের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে।

জনাব ইমন আরও বলেন, ডিএসইতে নতুন আইপিওর লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথম দিন ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় দিন তার ওপর ৫০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তারপর থেকে স্বাভাবিক ভাবে লেনদনে হবে। এবিষয়ে কমিশন পরবর্তী আইপিও থেকে এ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

ডিএসই’র পরিচালকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন জানায়, আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও প্লেসমেন্টধারী যদি একই ব্যক্তি হয়, সেক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে ১ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর লক ইন আরোপ করা হবে। একইসাথে বিগত দিনে যে সমস্ত কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এই নিময় প্রযোজ্য হবে।

Tagged