Stock Market Journal

কোম্পানির তথ্যে গলদ থাকলে কার্যকর মার্কেট গড়ে উঠবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোম্পা‌নির আর্থিক বিবরণীর তথ্যে গলদ থাকলে কোনোদিনই এপিসিয়েন্ট (কার্যকর) মার্কেট গড়ে উঠবে না ব‌লে মন্তব্য ক‌রে‌ছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এরিয়া অব কাভারেজ (পরিসর) বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। অথচ আমাদের মাত্র ৮৪ জন অফিসার। আর পিয়ন ও দারোয়ান নিয়ে আমরা ১৬০ জন কাজ করি।’

গতকাল, বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসির কনফারেন্স কক্ষে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে শক্তিশালী, অন্যদিকে অসহায়। একটা রেগুলেটরে মাত্র ৮৪ জন অফিসার। আর পিয়ন ও দারোয়ান নিয়ে মোট ১৬০ জন। আমাদের এরিয়া অব কাভারেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। আমাদের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জ, এসেট ম্যানেজমেন্ট, ফার্ম ম্যানেজার এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি থেকে শুরু করে আন-লিস্টেড কোম্পানির সবাইকে কাভার করতে হয়। অথচ আমাদের লোকবল মাত্র ৮৪ জন। অর্গনোগ্রাম হচ্ছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু এখনো লোকবল নিয়োগ করার পর্যায়ে আমরা পৌঁছাইনি।”

তিনি বলেন, “কোম্পানির মধ্যে অডিট কমিটির প্রধান হবেন একজন স্বাধীন পরিচালক, সিএফও”র দায়িত্ব কী, এমডির দায়িত্ব কী, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কী, অডিটরের দায়িত্ব কি- এসব কিছু নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এরপরে ডিসক্লোজার ভিত্তিতে আইপিও দেয়ার পরেও সমস্ত দোষ পড়ে কমিশনের ওপর। সেকেন্ডারি মার্কেট পড়ে গেলেও কমিশনকে দোষারোপ করা হয়। অথচ আমাদের কোনো বিনিয়োগ নেই। আমরা কারসাজি হলে ধরি, ডিমান্ড-সাপ্লাই ঠিক রাখি এবং এখানে যদি কেউ রিউমার (গুজব) ছড়ায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনি। তারপর মার্কেট ওঠা-নামা করার জন্য আমাদেরকে সমস্ত দোষ দেয়া হয়। রেগুলেটের হিসেবে এখানে অসহাত্ববোধ আমাদের।”

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, “যখন আমরা আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আনি, যে বার্নিং ইস্যুটা সবার সামনে চলে আসে। এখানে অনেক জাটলারি হয়, সেগুলো যাতে তারা আইপিও আসার আগেই ধরতে পারে, তাতে করে রেগুলেটররা অর্থাৎ আমরা অনেক শক্তিশালী হবো, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে, শক্তিশালী হবে। আল্টিমেটলি এপিসিয়েন্ট একটা মার্কেট গড়ে তুলতে আমার অনেকটা সমর্থন হবে। কারণ ইনফরমেশনে যদি গলদ থাকে কোনোদিন এপিসিয়েন্ট মার্কেট গড়ে উঠবে না।”

ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিসের ওপর গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সাংবাদিকদের প্রাধান্য দিয়ে আজকে এই মিটিংটি আয়োজন করেছি। আমি বারবার বলি- সমাজে, ক্যাপিটাল মার্কেটে (পুঁজিবাজার) এবং অর্থনীতিতে কী ঘটছে এগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো সাংবাদিকরা।”

সাংবাদিকদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্লিয়ার করার জন্যই আজকের এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খায়রুল হোসেন বলেন, “আমরা জানি, কম্পিউটার কিছুই না। অ্যানালিস্ট যে অ্যানালাইসিস করবে গার্বেজ ইন ও গার্বেজ আউট। ইনপুট যদি ভুল থাকে সেখানে যদি মিস লিডিং, ফেব্রিকেটেড এবং ওভার এস্টিমেটেড অথবা আন্ডার এস্টিমেটেড ইনফরমেশন থাকে, তা দ্বারা আপনি যে অ্যানালাইসিস করবেন, তার ফলে যদি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ইকোনোমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই সে জন্য ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিসে যে বিভিন্ন দিকগুলো আছে, সেগুলো আপনারা জেনে নেবেন। কোন কোন পয়েন্টে এবং কোথায় কোথায় দুর্বলতাগুলো হতে পারে এই ফোকাস এরিয়াগুলোকে আইডেনন্টিফাই করাই হবে যিনি প্রেজেন্টার এবং যারা প্যানেলিস্ট আছেন তাদের কাজ। আপনারা যারা পার্টিসিপেন্টে (অংশগ্রাহী) আছেন, আপনাদের কাজ বুঝে নেয়া।”

বিনিয়োগের পূর্বে বিনিয়োগকারীদের অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারী দেখে, এ কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পে করার অ্যাবিলিটি কী। তারা আরেকটা জিনিস দেখবে, তা হলো কোম্পানিটির ইনকাম জেনারেশন এবং ক্যাশ ফ্লো কী হবে। এরপর বিনিয়োগকারী যদি কিছু দেখে তা হলো- কোম্পানিটির অতীত কী ছিল, বর্তমান পারফরম্যানস কী এবং ভবিষ্যতটা কী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মধ্যে কোম্পানিটির অবস্থা কী এবং ইনভেস্ট করা যাবে কি না।”

তিনি আরও বলেন, “কোম্পানি নিজে যদি মনে করে, আমার ব্যালেন্স সিট ঠিক আছে, আমার অন্যান্য স্টেটমেন্টগুলো ঠিক আছে। তাহলে সে দেখবে রিটার্ন এবং ইক্যুইটি কোন অপারেশনস থেকে বেশি আসছে। তাহলে সে অপারেশনসকে সাপোর্ট দিতে গেলে আমার এক্সপানশন কোন দিকে নিতে হবে। এক্সপানশন কোথায় বেশি হচ্ছে অর্থাৎ কস্ট মিনিমাইজেশন এবং ইনকাম জেনারেশন মেক্সিমাইজেশন করার যথেষ্ট পরিকল্পনাটিও যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারবে কি না। অন্যথায় কোম্পানি নিজে যেমন বঞ্চিত হবে, মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কেটে স্থিতিশীলতা থাকবে না।”

অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সিকিউরিটি মার্কেটিংয়ের (বিএএসএম) ডিজি মো. মাহবুবুল আলম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, বিএসইসির পরিচালক কামরুল আনাম খান, এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এসএমজে/২৪/বা