Stock Market Journal

মতিউর ও পরিবারের ১৬ বিও হিসাব জব্দ

এসএমজে ডেস্ক

ছাগল-কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ওরফে পিন্টু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে পুঁজিবাজারে মোট ১৬টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশের পর এসব বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দুদকের পক্ষ থেকে মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে শেয়ারবাজারে থাকা বিও হিসাব জব্দের জন্য আবেদন জানানো হয়। দুদকের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি এসব বিও হিসাব জব্দের ব্যবস্থা নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যে ১৬টি বিও হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেছে, এর মধ্যে মতিউর রহমানের নামে চারটি, তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে দুটি, প্রথম পক্ষের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে দুটি, প্রথম পক্ষের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতার নামে তিনটি ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর নামে পাঁচটি বিও হিসাব রয়েছে।

পুঁজিবাজারে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিও হিসাব ও শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল। বিএসইসি এই প্রতিষ্ঠানকে বিও হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়। এরপর এসব হিসাব জব্দ করা হয়। এর ফলে এসব বিও হিসাব ব্যবহার করে এখন আর কোনো লেনদেন করা যাবে না।

এদিকে দুদক ও বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, দুই স্ত্রীর ঘরে মতিউর রহমানের মোট পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা হলেন আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপ্সিতা। আর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের ঘরে এক মেয়ে ও দুই ছেলে। তাঁরা হলেন ইফতিমা রহমান মাধুবী, মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফানুর রহমান ইরফান। দ্বিতীয় ঘরের সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগল-কাণ্ডেই মতিউর রহমান এখন দেশজুড়ে আলোচিত।

দুদকের তদন্তের অংশ হিসেবে উল্লেখিত আটজনের নামে শেয়ারবাজারে থাকা বিও হিসাব জব্দের আবেদন করা হয়েছিল। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শাম্মী আখতার শিবলীর নামে পাঁচটি বিও হিসাব পাওয়া গেলেও তাঁর তিন সন্তানের নামে এখন পর্যন্ত কোনো বিও হিসাবের হদিস মেলেনি।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিও হিসাব জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শেয়ারবাজারে মতিউর রহমান পরিচিত ছিলেন বাজে কোম্পানির ‘প্লেসমেন্ট-শিকারি’ হিসেবে। খারাপ মানের কোম্পানিকে বাজারে আনতে তিনি নানাভাবে সহায়তা করতেন। বিনিময়ে কম দামে নিতেন ওই কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার। পরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর ওই শেয়ার বিক্রি করে বড় অঙ্কের মুনাফা করতেন তিনি। একাধিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকাভিত্তিক দুটি ব্রোকারেজ হাউসে তিনি নিজের, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর নামে খোলা পাঁচটি বিও হিসাব থেকে এ পর্যন্ত মুনাফা তুলে নিয়েছেন প্রায় ৩৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, নিজের পরিবারের সদস্য ছাড়া মতিউর রহমানের দুই ভাই এম এ কাইয়ূম হাওলাদার ও নূরুল হুদা, বোন হাওয়া নূর বেগম এবং ছেলে ও মেয়েদের নামে খোলা বিভিন্ন কোম্পানির নামেও প্লেসমেন্ট শেয়ারের হদিস পাওয়া গেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এসকে ট্রিমস নামের একটি কোম্পানির মালিকানার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তাঁর ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী।