এসএমজে ডেস্ক
পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মুনাফায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাতে এক বছরে ডিএসইর মুনাফা ৩৫ শতাংশের বেশি কমেছে। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে সংস্থাটির কর–পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৮১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১২৫ কোটি টাকা।
ডিএসইর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সামনে রেখে এক বছরের কার্যক্রমের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে সংস্থার সার্বিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বিবরণীও প্রকাশ করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর সংস্থাটির এজিএম অনুষ্ঠিত হবে।
ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুনে সমাপ্ত ২০২২–২৩ অর্থবছরে ডিএসইর আয় কমে ২৩৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা এর আগের অর্থাৎ ২০২১–২২ অর্থবছরে ছিল ৩২১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে ডিএসইর আয় কমেছে ৮৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৬ শতাংশ। সংস্থাটির আয়ের বড় উৎস লেনদেন থেকে পাওয়া কমিশন আয়।
পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়লে ডিএসইর আয়ও বাড়ে। আর লেনদেন কমে গেলে আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। লেনদেন মাশুল ছাড়াও ডিএসইর আয়ের অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রাখা অর্থের বিপরীতে সুদ–আয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আদায় করা বিভিন্ন ধরনের মাশুল বা ফি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে লেনদেন মাশুল বাবদ সংস্থাটির আয় হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের ১৫৮ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ কম।y
ডিএসই–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত অর্থবছরে প্রায় পুরো সময়ে শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপিত ছিল। এ কারণে বাজারের লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। ২০২১–২২ অর্থবছরে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তা কমে ৭৯৩ কোটি টাকায় নেমে আসে।
বাজারের পতন ঠেকাতে গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে নতুন করে আবার সব শেয়ারের ওপর ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর পর থেকে বাজারে লেনদেন কমে যায়। তখন থেকে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারও ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এ কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশেরই লেনদেন হচ্ছে না। যার ফলে লেনদেন বাবদ আয়ও কমেছে ডিএসইর।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ডিএসইর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় এসেছে সুদ থেকে। এ খাত থেকে আসে ৬৮ কোটি টাকার বেশি, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৬ কোটি টাকা।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে লেনদেনের কমিশন থেকে প্রাপ্ত মাশুল বা আয়। কিন্ত গত অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় কমে গেছে। এ কারণে সার্বিকভাবে ডিএসইর আয় ও মুনাফা—দুটোই কমেছে।
ডিএসইর পাশাপাশি অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেরও (সিএসই) আয় ও মুনাফা কমে গেছে। গত অর্থবছরে লেনদেনের কমিশন বাবদ সিএসইর আয় আগের বছরের চেয়ে অর্ধেক কমে সাড়ে চার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ কারণে সংস্থাটির কর–পরবর্তী মুনাফা ৩৯ কোটি টাকা থেকে কমে ৩৪ কোটি টাকায় নেমে আসে।