বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এক দুর্যোগ পরিস্থিতি চলছে। করোনাভাইরাসজনিত কারণে স্বাস্থ্য খাতের এই দুর্যোগ কম বেশি প্রতিটি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পুঁজিবাজারেও এই দুর্যোগ বা সংকটের কথা বলা হচ্ছে। তবে অর্থনীতি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়াটা স্বাভাবিক। তাই এই স্বাভাবিক সংকটকে স্বাভিক নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই মেকাবিলা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার আমাদের পুঁজিবাজারের এই সংকট কেবল করোনার কারণেই নয়, এটি চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এছাড়া আরো একটি বিষয় এখানে দেখা দরকার, সেটি হচ্ছে আমরা কিন্তু দেখছিলাম সংকট আসছে। তারপরও আমরা কি দুর্যোগকালীন কোনো জরুরি ব্যবস্থা পুঁজিবাজারের জন্য নিতে পেরেছি? বিশেষ সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে বাজারের পতন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, এটি কতটা ভালো হবে পুঁজিবাজারের জন্য, এ বিষয়ে কি পর্যাপ্ত ভাবনা চিন্তা করা হয়েছে? এসব প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয় পুরো অর্থনীতি এবং লাখ-লাখ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ জড়িত। সুতরাং কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে বিশ্লেষণ ও অনেক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। এটি যেনো কেবলই আকস্মিক বা ভাবাগের বিষয় হয়ে না যায়। কারণ বড় সংকট থাকলে বড় সমাধানও থাকে। সঠিক বিষয়টিকে বুঝতে পারাই আসল কাজ।
আরো যে বিষয়টি আমরা বারবার বলার চেষ্টা করছি- আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে ২০০৮-০৯ সালে ব্যাপকভাবে সূচক বেড়েছে। এরপরও বিভিন্ন সময় বেড়েছে। সেখানে অনেক শেয়ার অতিমূল্যায়িতও হয়েছে। এরপর যখন সূচক পড়তেছে, সেটিকে বিশ্লেষকরা কারেকশন বলছেন। কিন্তু আমাদের বাজারের চিত্র পুরো উল্টো। এখানে প্রায় এক দশক ধরে বাজার পতনে রয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের কোনো সংযোগ নেই। আবার আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের চালচিত্রের কোনো মিল নেই। এক তরফাভাবেই বাজার নিম্নমুখী এবং অকারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আমাদের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য করেনাভাইরাস পরিস্থিতিকে দায়ী করা সঠিক হবে বলে মনে হয় না।