Stock Market Journal

তবে কনটেজিয়ন কী করনারই পূর্বভাস দিয়েছিল?

বিনোদন ডেস্কঃ

বর্তমান বিশ্বের মহামারি আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রায় এক দশক আগে নির্মিত কনটেজিয়ন সিনেমায় এমনই এক ভাইরাসের পূর্বাভাস দিয়েছিলো। ছবিটির অনেক কাহিনীর সঙ্গে বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অনেক মিল রয়েছে।

ছবিটির নাম ‘কনটেজিয়ন’। ছবিটিতে দেখানো হয়, চীন থেকে একটি ভয়াবহ এবং রহস্যময় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ধিরে ধিরে নিশ্তেজ হয়ে পরে গোটা বিশ্ব। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। তবে ২০১১ সালে চলচ্চিত্রটি কোনভাবেই ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ছিল না। কিন্তু চলচ্চিত্রটির গল্প আর বাস্তবতার সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিল দেখে ২০২০ সালের এই তিন মাসে চলচ্চিত্রটি ‘হিট’ হয়ে ওঠে। গেলো তিন মাসে কনটেজিয়ন জায়গা করে নিয়েছে নবম স্থানে। এই ছবিটির সামনে রয়েছে শুধুমাত্র হ্যারি পটার সিরিজের আটটি চলচ্চিত্র।

নয় বছর পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফিরে এসেছে ‘কনটেজিয়ন’। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল আইটিউন স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চলচ্চিত্রটি। সেই সঙ্গে গুগল সার্চের তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছে ‘কনটেজিয়ন’।

‘কনটেজিয়ন’ চলচ্চিত্র তৈরি করেছে ওয়ার্নার ব্রাদারস। তারা বলেছে, চীনে যখন প্রথম করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন বিশ্বের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় এটির অবস্থান ছিল ২৭০তম।

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রটিতে একজন নারী ব্যবসায়ী (চরিত্রে অভিনয় করেছেন গিনেথ প্যালট্রো) একটি রহস্যময় এবং মারাত্মক ভাইরাসে মারা যান। চীনে একটি সফরের সময় তিনি ওই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। দর্শকরা বলছেন, বর্তমান বাস্তব জীবনের ভাইরাস সংক্রমণ যেমন চীন থেকে শুরু হয়েছিল, তেমনি চলচ্চিত্রটির এরকম কাহিনীর মিলের কারণেই জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

চলচ্চিত্রটির বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সাদৃশ্য‍:

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রটির সঙ্গে বাস্তব ঘটনাবলীর অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে। প্যালট্রো অভিনীত চরিত্রটি এমইভি-ওয়ান নামের একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় হংকংয়ের একজন বাবুর্চির সঙ্গে করমর্দনের মাধ্যমে, যিনি একটি শূকর জবাই করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ওই শূকরটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বাদুরের মাধ্যমে।

এরপর দেশে ফিরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, চারদিনের মাথায় তিনি মারা যান। এরপরে তার ছেলেরও একই রোগে মৃত্যু হয়। কিন্তু তার স্বামী, ম্যাট ডেমনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাইরাসটি আক্রমণ করতে পারেনি।

বাস্তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন যে, গত ডিসেম্বর মাস নাগাদ চীনের উহান শহরে পশু থেকে মানব শরীরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করে। তবে কোন প্রাণী থেকে করোনা ভাইরাস এসেছে, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে চীনের কর্তৃপক্ষ উহান শহরের একটি পশুপাখির বাজারকে ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল বলে শনাক্ত করেছে।

যেভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, চলচ্চিত্রের কল্পিত ভাইরাসটিও একে অপরকে স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চলচ্চিত্রে কল্পিত এবং বাস্তব ভাইরাস, উভয়ের ক্ষেত্রেই ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটে। তবে চলচ্চিত্রের কল্পিত এমইভি-ওয়ান ভাইরাসের ধারণাটি এসেছিল বাস্তবের আরেকটি ভাইরাস নিপাহ থেকে, যা অবশ্য করোনা ভাইরাস গোত্রের নয়। কল্পিত ভাইরাসের চেয়ে অবশ্য বাস্তব ভাইরাস কম প্রাণঘাতী। চলচ্চিত্রে মৃত্যুহার বলা হয় ২৫%, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ৩.৪%।

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রে এমইভি-ওয়ানে আক্রান্ত হয়ে একমাসের মধ্যেই বিশ্বে দুই কোটি ষাট লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে চীনে তিন মাস আগে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটনার পর এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।

ওই চলচ্চিত্রের সঙ্গে শুধুমাত্র তুলনা করা যায় ১৯১৮-১৯২০ সাল নাগাদ বিস্তার হওয়া স্প্যানিশ ফ্লুর সঙ্গে- যাতে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

আইসোলেশন:

চলচ্চিত্রে যখন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন এপিডেমিক ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (যা বাস্তবের একটি প্রতিষ্ঠান) কর্মীরা সংক্রমিতদের সনাক্ত এবং আইসোলেশন করতে শুরু করেন।

ওই চলচ্চিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের শহর শিকাগো কোয়ারেন্টাইন করা হয়, যার সঙ্গে চীনের এলাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলার তুলনা করা যেতে পারে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেকটা একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালিও।

এসএমজে/২৪/রা