Stock Market Journal

টাকার নোটেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশও রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ২৫টি দেশের নাম উল্লেখ করেছে, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এ অবস্থায় বাংলাদেশে প্রতিদিনই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। বুধবার সংস্থাটি জানায়, যাত্রী যাতায়াতের দিক থেকে এখন উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন স্তরে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে নানান গুজব আর আতঙ্কের মধ্যে নতুন শঙ্কার কথা জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, নোংরা টাকার নোট থেকেও ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস। সংস্থার পক্ষ থেকে মানুষকে বিকল্প নোট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ স্বীকার করেছে, কাগজের নোটগুলো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বহন করতে পারে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দিনে অন্তত দুইবার স্মার্টফোনের স্ক্রিন পরিষ্কারের অনুরোধ করা হয়েছে। ব্যাংকের ডেভিড বা ক্রেডিট কার্ডও পরিষ্কার রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। আর সদস্যসচিব সিভিল সার্জন। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদস্যসচিব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপজেলা কমিটির উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে—একটি সমন্বয় কমিটি, অন্যটি টেকনিক্যাল কমিটি। সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়েও একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা দেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে করণীয় বিষয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে আরো প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা ও বিভাগীয় শহরে বড়ো বড়ো শপিং মল, বিপণিবিতান, বড়ো আবাসিক হোটেলে করোনা ভাইরাস নিয়ে নিরাপত্তা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে সব জায়গায় সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে একটা বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, থারমাল স্ক্যানারে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা যাবে না। করোনার উপসর্গ হিসেবে জ্বর থাকলে সেটি শনাক্ত হবে। এছাড়া বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তাদের ১৪ দিন চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কারণ উপসর্গ ১৪ দিনের মধ্যে দেখা দেয়।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ মোট ২৫ দেশ কোভিড-১৯-এর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। যে ২৫টি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের জন্য ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের জরুরি তহবিল দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

করোনামুক্তির সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের কুয়েতে প্রবেশে মানা

করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশসহ ১০ দেশের নাগরিকদের কুয়েত প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটির সরকার। এই ১০ দেশের নাগরিকরা কুয়েত দূতাবাসের দেওয়া সনদ দেখাতে পারলে কেবল তাদের সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। মঙ্গলবার কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। ৮ মার্চ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বাংলাদেশ ছাড়াও ফিলিপাইন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিশর, সিরিয়া, আজারবাইজান, তুরস্ক, জর্জিয়া ও লেবাননের নাগরিকদের ওপর এই কড়াকড়ি কার্যকর হবে।

চার দেশের নন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা স্থগিত

ইতালিতে বাংলাদেশি এক নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা । এ নিয়ে তিন দেশে মোট ছয় জন বাংলাদেশির এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেল, যাদের মধ্যে দুই জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি দুঃসংবাদ যে, ইতালিতে একজন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি অসুস্থ, কিন্তু মাইল্ড অসুস্থ। তিনি বাসাতেই আছেন, বাসায় রেখেই তার চিকিৎসা করা হচ্ছে।’ আইইডিসিআরের পরিচালক জানান, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ইরান, ইতালি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিমানবন্দরে শুধু চীনাদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে : চীনা রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নামে কেবল চীনা নাগরিকদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বুধবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের সাইট অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯৫ ভাগই চীনের বাইরের দেশগুলোর। লি জিমিং আরো জানান, চীনে যেসব বিদেশি নাগরিক আছেন তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তা দুই মাস বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে কর্মরত চীনাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তা বাড়ানো হচ্ছে না। করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশের এ ধরনের আচরণকে ‘স্টুপিডিটি’ বলে অভিহিত করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের নাগরিকরা আছেন এমন অনেক দেশেই এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে বাংলাদেশও এ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। করোনা প্রতিরোধে এবং চিহ্নিতকরণে নেওয়া পদক্ষেপও যথেষ্ট ও সন্তোষজনক নয়। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না বিমানবন্দরে তা যেভাবে যাচাই করা হচ্ছে সেটি অবৈজ্ঞানিক ও ত্রুটিপূর্ণ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে গতি আনতে চীনের নাগরিকদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

এসএমজে/২৪/রা