এসএমজে ডেস্ক:
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১৫টি সদস্য প্রতিষ্ঠান তথা ব্রোকারহাউজ তাদের গ্রাহকদের জমাকৃত টাকার একাংশের হদিস দিতে পারছে না। এই টাকা তারা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে বা আত্মসাৎ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রাহকদের যে পরিমাণ টাকা থাকার কথা বাস্তবে তার চেয়ে ৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইর নির্দেশে ব্রোকারহাউজগুলোর পাঠানো হিসাব থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ কেলেঙ্কারির পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবের (Consolidated Accounts) তথ্য দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। তাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে বুধবার (৮ জুলাই) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পষর্দের বৈঠকে ম্যানেজমেন্ট যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে তাতে এই ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।
ওই ব্রোকারহাউজগুলোর মধ্যে রয়েছে- এপেক্স গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, ল্যাব এইড গ্রুপ ও ডোরিন গ্রুপ। এর মধ্যে ল্যাবএইড ছাড়া বাকী তিনটি গ্রুপের একটি করে কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ব্রোকারহাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবারের বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক–সবাই একমত হয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার ও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মতো আর একটি ঘটনাও যাতে না ঘটে যে কোনো মূল্যে এটি নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান এই ইস্যুতে অনেক বেশি সোচ্চার ছিলেন বলে জানা গেছে। শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী এবং অপর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মোহাম্মদ শাজাহান তাকে সমর্থ বলে জানা যায়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট অবিলম্বে ওই ব্রোকারহাউজগুলোকে গ্রাহকদের টাকা সমন্বিত হিসাবে ফিরিয়ে দিতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা না হলে বিদ্যমান আইনে ডিএসই খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
জানা গেছে, গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে। ঘাটতির পরিমাণ ২১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গ্রাহকদের এই পরিমাণ টাকা তারা অন্য হিসাবে সরিয়ে নিয়েছে অথবা আত্মসাৎ করেছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘাটতি ওপেক্স–সিনহা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সিনহা সিউকিরিটিজে।
নন–ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজে ঘাটতির পরিমাণ ৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।
এক্সপো ট্রেডার্স নামের ব্রোকারহাউজে গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা ঘাটতি আছে।
শীর্ষ পাঁচ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা সাদ সিকিউরিটিজে ঘাটতির পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
বাকী ১০ ব্রোকারহাউজে সর্বনিম্ন ৪ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘাটতি আছে।
এই ব্রোকারহাউজগুলোর মধ্যে আছে– ল্যাব এইড গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিরর ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ডোরিন গ্রুপের মালিকানাধীন ব্রোকারহাউজ নুর–ই–আলম সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং, ফারইস্ট স্টক এন্ড বন্ডস, এএনএফ ম্যানেজমেন্ট, এসিই ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস, হাবিবুর রহমান সিকিউরিটিজ, র্যাপিড সিকিউরিটিজ ও গেটওয়ে ইক্যুইটি রিসোর্সেস লিমিটেড।
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন ডিএসইর সদস্য প্রতিষ্ঠান ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শহীদুল্লাহ, তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিপা সুলতানা ব্রোকারহাউজটির সব অফিস বন্ধ করে দিয়ে গা দেয়। গত ৬ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা গ্রাহকদের ১৮ কোটি টাকা আত্মাসাৎ করার কথা স্বীকার করেন।
ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ঘটনায় অনেক দিন পর ডিএসই গা–ঝাড়া দিয়ে ওঠে। সব ব্রোকারহাউজের কাছে চিঠি দিয়ে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের তথ্য জানতে চায়। আর তাতেই থলের বেড়াল বের হয়ে আসে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ডিএসই আগে থেকে ব্রোকারহাউজগুলো নিয়মিত পরিদর্শন (Inspection) করলে হয়তো ব্রোকারহাউজগুলো গ্রাহকদের এত টাকা সরাতে পারতো না। পাশাপাশি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের আগেও শাহ মোহাম্মদ সগীরসহ যে কেলেঙ্কারিগুলো হয়েছে, সেগুলো এড়ানো যেত।
এসএমজে২৪/কা