এসএমজে ডেস্ক
দেশের পুঁজিবাজারে গত ২০২৩ সালের পুরো সময়ে তালিকাভুক্ত ৭০টি কোম্পানির শেয়ার দরে সামান্যতম হেরফের হয়নি। এসব শেয়ার যে দর নিয়ে ২০২৩ সালে শুরু করেছিল, ২০২৪ সালের শুরুতেও সে দরেই পড়ে আছে। এ তালিকায় রয়েছে ভালো মৌলভিত্তির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারও। যদিও এ সময়ে বন্ধ, রুগ্ণ ও লোকসানি অর্ধশত কোম্পানির শেয়ারদর কোনো কারণ ছাড়াই দ্বিগুণ থেকে ১১ গুণ বেড়েছে।
যেসব কোম্পানির দর গত বছর একটুও হেরফের হয়নি, তার মধ্যে গ্রামীণফোন, রবি, আইডিএলসি, রেনাটা, বিএটি বাংলাদেশ, লংকাবাংলা, লিনডে বিডি, পাওয়ার গ্রিড, তিতাস গ্যাস, ইউনাইটেড পাওয়ার, ওয়ালটন, এসিআই, আরএকে সিরাসিক, বেক্সিমকো লিমিটেড অন্যতম। গতকাল মঙ্গলবারের দর অনুযায়ী ৭০ কোম্পানির বাজার মূলধন (বাজারদরে সব শেয়ারের মোট মূল্য) ২ লাখ ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মোট বাজার মূলধনের ৪৫ শতাংশ। মঙ্গলবার তালিকাভুক্ত ৩৫৫ কোম্পানির শেয়ার ও ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
সারা বছর সর্বনিম্ন দরের তুলনায় সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত দর ওঠানামা করেছে, এমন শেয়ার রয়েছে ৩৩টি। দরের ওঠানামা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল ৮৪টির। এসব শেয়ারের বাজার মূলধন ১ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, যা মোটের সাড়ে ২৭ শতাংশ। বাজারের প্রতি ১০০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ৭৩ টাকার শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেন হয়নি। এসব শেয়ারের অন্যতম স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, রেকিট বেনকিজার, ইবনে সিনা, পদ্মা অয়েল, আইসিবি, বিএসআরএম লিমিটেড, ডেসকো, ডিবিএইচ, সিঙ্গার, বিএসআরএম স্টিল, ব্র্যাক ব্যাংক, মারিকো ইত্যাদি। বছরজুড়ে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরের ব্যবধান সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল, এমন শেয়ার ছিল ৮০টি। অর্থাৎ আগের বছরের দরে পড়ে থাকা ৭০টিসহ মোট দেড়শ কোম্পানির শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেনই হয়নি। বছরজুড়ে বিক্রি করতে চেয়েও তেমন ক্রেতা মেলেনি এমন শেয়ার আরও প্রায় ১০০টি।
২০২৩ সালে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১১৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩০টির এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১৪৮টির।
এই চিত্রের বিপরীতে বছরের সর্বনিম্ন দরের তুলনায় সর্বাধিক ১১ গুণ হয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। গত এপ্রিলের শুরুতেও শেয়ারটির ফ্লোর প্রাইস ৯ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। আট মাস পর গত ১৯ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ১১০ টাকায় ওঠে। একইভাবে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর ২৮ টাকা থেকে ১৮৮ টাকায়, সি পার্ল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের দর ৮১ টাকা থেকে ৩২৮ টাকায় এবং শ্যামপুর সুগার মিলসের দর ৬৩ টাকা থেকে ২৪৫ টাকায় ওঠে।
দাম বেড়ে তিন থেকে প্রায় চার গুণ হয়েছে খুলনা প্রিন্টিং, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, আরএন স্পিনিং, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল টি এবং ফার কেমিক্যালের। এ ছাড়া দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে এমন শেয়ার ৪০টি। এগুলোর অন্যতম হলো দেশবন্ধু পলিমার, জেমিনি সি ফুডস, এমবি ফার্মা, ইমাম বাটন, লিবরা, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফাইন ফুডস, মিরাকল, জিকিউ বলপেন, বিডি থাই, মুন্নু এগ্রো, জুট স্পিনার্স, ওরিয়ন ইনফিউশনস, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, মেট্রো স্পিনিং, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ইয়াকিন পলিমার, সিটি জেনারেল, চার্টার্ট লাইফ, সোনালী লাইফ, সোনালী আঁশ, ফু-ওয়াং ফুডস ইত্যাদি। তবে এসব শেয়ারের দর এখন কমছে। ফলে লোভে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীর যে বিশাল অংশ এসব শেয়ার কিনেছিলেন, তারা পড়ছেন বড় লোকসানে। ২০২২ সালের শেষ দিনের তুলনায় ২০২৩ সালের শেষ দিনে এসে ২৪ কোম্পানির শেয়ারদর কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমেছে। এ হিসাবে সর্বাধিক ৪৭ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে সি পার্ল হোটেলের। ২০২২ সালের শেষে শেয়ারটির দর ছিল ১৮৭ টাকা, যা গত বছর শেষে নামে ১০০ টাকার নিচে। যদিও বছরের মাঝে শেয়ারটির দর ৩২৮ টাকায় উঠেছিল।