ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বুধবার (১৬ আগস্ট) দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গড়পড়তা সব খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। এতে বড় পতন হয়েছে সবকটি মূল্য সূচকের। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই দরপতন হলো।
এর আগে সোমবার লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে হ্যাকাররা একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে গুজব ছড়ায় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। এছাড়া সামনে রিজার্ভ কমে যেতে পারে, এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ওইদিন পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়।
বুধবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, আইসিবির ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে আইসিবির ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ফলে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। আতঙ্কে লেনদেনের শুরু থেকেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। সেই সঙ্গে বড় পতন হয় মূল্য সূচকের।
শেয়ারবাজারে এমন গুঞ্জন ছড়ালেও আইসিবি হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আইসিবি’র ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে। কোনো ধরনের হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েনি।
অনেকে আইসিবি’র ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না- বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। এটি ইন্টারনেট ধীরগতি হওয়ার কারণে হতে পার। আবার অনেক সময় দেখা যায় ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে, এমন সতর্কতা দিয়েও কিছু কিছু পিসি থেকে ওয়েবসাইটে ঢোকা যায় না।
এদিকে আইসিবি নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই পতন প্রবণতা লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে।
এতদিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ১৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির। আর ১৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর মাধ্যমে দুদিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৬৬ পয়েন্ট কমে গেলো।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ১০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৬ কোটি ৯৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ২৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, জেমিনি সি ফুড, আরডি ফুড, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৫টির এবং ৭৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।